জলবায়ুর চোখরাঙানির জেরে বিশ্ব জুড়ে তাপমাত্রা বাড়তে পারে ১.২ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এমনই আশঙ্কার ছবি উঠে এসেছে ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডব্লিউএ)-এর প্রকাশিত রিপোর্টে। তার জেরে জনজীবনে বাড়ছে দুর্ভোগ। প্রভাব পড়ছে মানুষের শরীরেও। নতুন গবেষণায় জানা যাচ্ছে মস্তিষ্কের কিছু রোগের ক্ষেত্রে অবস্থা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বৃদ্ধির ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে স্ট্রোক, মাইগ্রেন, মেনিনজাইটিস, মৃগীরোগ, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, সিজোফ্রেনিয়া, অ্যালজাইমার এবং পারকিনসন রোগগুলো । আমরা প্রতিদিন বেশি তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতাজনিত যে সব পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই তা নিয়ন্ত্রণের রাশ থাকে মস্তিষ্কের হাতে। মস্তিষ্কই ঠিক করে দেয় আমাদের কী করণীয় যেমন খুব রোদ্দুরে নিজেদের বাঁচাতে ছাওয়ায় আশ্রয় নেওয়া বা শরীরে ঘামের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। আমাদের মস্তিষ্কের কোটি কোটি স্নায়ু কোশ ঠিক যেন এক একটা কম্পিউটারের মতো। তারা প্রতিনিয়ত শিখে চলেছে, নতুন জিনিসের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে। কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের মতো স্নায়ু কোশের বৈদ্যুতিক উপাদানগুলো পরিবেষ্টিত তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হারে কাজ করে এবং তাপমাত্রার একটি সংকীর্ণ পরিসরে একসঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হয়। আমাদের দেহ এবং বিভিন্ন অঙ্গ এই নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ভালোভাবে কাজ করতে পারে আর এই অভ্যাস আমরা সহস্রাব্দ ধরে তৈরি করেছি। মস্তিষ্কের অনেক অংশই আসলে তাদের তাপমাত্রা সীমার শীর্ষের কাছাকাছি কাজ করছে, অর্থাৎ তাপমাত্রা বা আর্দ্রতার সামান্য বৃদ্ধির ফলে তারা একসাথে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে, ফলত দেখা দেয় অস্বাভাবিকতার। আমাদের শরীরে ঘাম হওয়া বা গরম বোধ কমে যায় , শরীর এবং মস্তিষ্ক হারিয়ে ফেলে তার স্বাভিবিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষমতা। তাপপ্রবাহের কারণে উপসর্গগুলো আরও বৃদ্ধি পায়। চরম আবহাওয়া ঘুমের স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। যেমন মৃগীরোগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গরমের কারণে কম পরিমাণে ঘুম বা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায় যে কারণে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গ আরও খারাপ হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের স্নায়ুর নানা রকম সমস্যা হতেই পারে, উচ্চ তাপমাত্রা রক্তকে ঘন করে তুলতে পারে এবং তাপপ্রবাহের সময় ডিহাইড্রেশনের কারণে স্ট্রোক হতে পারে। বিশ্বজুড়ে ১৯৬৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত গবেযণাপত্র থেকে জানা গিয়েছে, আবহাওয়ার এই পরিবর্তন স্নায়ুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরও বিভিন্নধরনের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।