সম্প্রতি একটি সৌর ঝড় আছড়ে পড়ে মহাকাশে। সেই সৌর ঝড়ের প্রভাব পড়ে পৃথিবীতেও। উভয় গোলার্ধ থেকেই মানুষ এই মনোমুগ্ধকর, উজ্জ্বল মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি বা অরোরার বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করেছিল। যদিও মেরুপ্রভা সচরাচর উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু ও সংলগ্ন অঞ্চলে লক্ষ করা যায় তবে এই সপ্তাহান্তে এটি উত্তর গোলার্ধের হাওয়াই পর্যন্ত এবং দক্ষিণ গোলার্ধের ম্যাকে পর্যন্ত দেখা গেছে।
চার্জযুক্ত ইলেকট্রন বা আয়নিত কণা যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করে তখন সৃষ্টি হয় মেরুজ্যোতি। এই চার্জযুক্ত পদার্থ সবসময় সূর্য থেকে নির্গত হতে থাকে। বিশেষ করে সৌর ঝড়ের মতো কার্যকলাপের সময়। পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের কারণে আমাদের বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগটাই এই চার্জযুক্ত কণার প্রবাহ থেকে সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু পৃথিবীর দুই মেরুর কাছে এরা তাদের ধ্বংসলীলা দেখাতে পারে। আমেরিকার মহাকাশ সংস্থা নাসা থেকে জানা গেছে সূর্যে দু’টি বিস্ফোরণ ঘটেছে ফলে সূর্য থেকে শক্তিশালী সৌরশিখা মহাকাশে ছড়িয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে সৌরঝড় যা ধেয়ে এসেছে পৃথিবীর দিকে। এই সৌরঝড়ে সূর্যের কেন্দ্র থেকে প্লাজ়মা এবং চৌম্বকীয় তরঙ্গের বিরাট বিস্ফোরণ হয়। এর প্রভাবে ইউরোপ, অস্ট্রেলেশিয়া অঞ্চলের বহু দেশে রাতের আকাশে দেখা গিয়েছে রঙবেরঙের মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি- সবুজ, লাল, নীল প্রভৃতি রঙের ছটা। আমরা জানি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রায় ২০% অক্সিজেন, ৭৮% নাইট্রোজেন, এছাড়াও ০.০৪% কার্বন ডাই অক্সাইড এবং আর্গন রয়েছে । বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে থাকা অক্সিজেন অণুতে যখন উচ্চ-গতি সম্পন্ন ইলেকট্রন এসে আঘাত করে, তখন তারা অক্সিজেন অণুগুলোকে (O₂) পৃথক পরমাণুতে বিভক্ত করে। সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মিও এই কাজটি করে, এবং উৎপন্ন অক্সিজেন পরমাণু, O₂ অণুর সাথে বিক্রিয়া করে ওজোন (O₃) তৈরি করে যা আমাদের ক্ষতিকর UV বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু, মেরুপ্রভা বা অরোরার ক্ষেত্রে, উত্পন্ন অক্সিজেন পরমাণুগুলো উত্তেজিত অবস্থায় থাকে এবং শক্তি নির্গত করতে থাকে ফলে আলোর বিচ্ছুরণ সৃষ্টি হয়। মেরুপ্রভার সবুজ বা লাল রঙের উৎস হল এই উত্তেজিত অক্সিজেন পরমাণু। এছাড়াও আয়নিত নাইট্রোজেন অণু নীল এবং লাল আলো নির্গত করতে পারে। কম উচ্চতায় এটি ম্যাজেন্টা রঙও তৈরি করতে পারে। মেরুপ্রভা যথেষ্ট উজ্জ্বল হলে তবেই এই সমস্ত রঙ খালি চোখে দেখা যায়। ঠিক যেমন এইবারে আমরা দেখতে পেয়েছি।