২০২০ সালে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির সোলার অরবিটার প্রোব প্রথমবার আমাদের সূর্যের খুব কাছাকাছি থেকে নেওয়া কিছু ছবিতে ক্যাম্পফায়ার নামের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কিছু ঝলকানি বন্দি করতে পেরেছিল। এগুলো কোনো বিধ্বংসী আগুনের গোলা নয়, খুব ছোটো ছোটো আগুনের শিখা। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ‘ন্যানোফ্লেয়ার’। আকারে এরা সোলার ফ্লেয়ারের মাত্র এক মিলিয়ন বা এক বিলিয়নতম অংশ। প্রায় ৫২টি ক্যাম্পফায়ারের পর্যবেক্ষণ করে, গবেষকরা দেখেন যে প্রায় ৮০% ক্যাম্পফায়ারের শিখা তৈরির আগে শীতল প্লাজমা থেকে তৈরি একটি অন্ধকার অবয়ব লক্ষ করা গেছে। যখন এই শীতল প্লাজমা উত্থিত হয়, তখন এর নীচে একটি উজ্জ্বলতা দেখা দেয়। সেই উজ্জ্বলতা ক্যাম্পফায়ারে পরিণত হয়। সূর্যের তেজ কমা-বাড়া নির্ভর করে তার সৌরচক্রের বা সোলার সাইকেলের উপর, যা সাধারণত, ১১ বছরের হয়। এই সৌরচক্রে ফোটোস্ফিয়ারে তৈরি হয় একের পর এক সৌরকলঙ্ক বা ‘সানস্পট’। সৌরকলঙ্কের সংখ্যা যত বাড়ে ততই শক্তি বাড়ে সৌরচক্রের। ৩০০টি বা তারও বেশি সৌরকলঙ্ক তৈরি হলে সেই সৌরচক্রটি হয়ে ওঠে অত্যন্ত শক্তিশালী। সংখ্যাটা ২০০ বা তার কম হলে সেই সৌরচক্রকে দুর্বল বলা হয়। আর সৌরকলঙ্কের সংখ্যা ২৫০ হলে সেই সৌরচক্রটি হয় মাঝারি শক্তির। এই সময় সূর্যে দেখা যায় সোলার উইণ্ড, সৌরঝড় বা সোলার স্টর্ম, সোলার ফ্লেয়ার এবং করোনাল মাস ইজেকশান -এর মতো ভয়ঙ্কর কিছু ঘটনা। ফ্লেয়ার এবং মাস ইজেকশান ঘটে যখন বিপরীত মেরুর চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোতে জট লেগে যায় এবং একে অপরকে ক্যান্সেল করে দেয়, যার ফলে প্রচুর শক্তি তৈরি হয়। হয়তো এই ছোটো ক্যাম্পফায়ার তৈরি হচ্ছে সানস্পট থেকে দূরের কোনও জায়গায় যেখানে চৌম্বক ক্ষেত্রগুলো ততটা শক্তিশালী নয়। তাই এই ছোটো সৌরঝলকগুলোর শক্তি কম। তবে বড়ো বড়ো সৌরঝলক ও এই ন্যানোফ্লেয়ারগুলো একই প্রক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে কি না, তা এখনও বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। মনে করা হয় যেহেতু ক্যাম্পফায়ারের তাপমাত্রা ০.৫ মিলিয়ন থেকে ২.৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তাই তারা সূর্যের বায়ুমণ্ডল, করোনাকে উত্তপ্ত করতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সূর্যের বায়ুমণ্ডলের নানা অংশকে নানা রকম ভাবে তাতিয়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকতে পারে এই ছোটো ছোটো ক্যাম্পফায়ারগুলোর।