উষ্ণায়নে সাগরের জলস্তর দ্রুত উঠে আসছে উপরে। পৃথিবীর নব্বই শতাংশ নগর সাগরের ধার ঘেঁষে তৈরী। কাজেই আগামীর দুশ্চিন্তাতো আছেই। কিন্তু তারই পাশাপাশি সৃষ্টি ও উদ্ভাবনের ভাবনাও থেমে নেই। জলে ভাসা আস্ত শহর তৈরি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান-এ। তাতে থাকতে পারবেন অন্তত দশহাজার থেকে পনেরো হাজার মানুষ। ২০২৮ সালের মধ্যে বুসান ভাসমান নগরী, পৃথিবীর প্রথম সম্পূর্ণ ভাসতে থাকা এবং স্মার্টশহর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
সবদিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই শহরের থাকবে- নিজের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, নিকাশী, জল সরবরাহ, হাসপাতাল এবং আর যা যা লাগে সব কিছুই। সমুদ্রের বুকে ভাসতে থাকা এই শহরের মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগ থাকবে ব্রীজ দিয়ে, কিন্তু যারা এখানে বসত করবেন তারা সব সুযোগ সুবিধাই পাবেন আধুনিক নগরীর মতো। নগরায়ন বাড়ছে সারা পৃথিবীতেই। জায়গা সীমিত আর ভবিষ্যৎ! উষ্ণায়ন এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ঘিরে শঙ্কা থেকেই এই পরিকল্পনা। হাউসবোটের কথা আমরা জানি। নৌকায় ভাসতে থাকা ছোট ছোট জনপদ এখনই আছে-নেদারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আরো কিছু জায়গায়। এগুলো সবই অনেকগুলো হাউসবোট একসাথে জড়ো করে একে অপরের সাথে বাঁধন দিয়ে আটকে রাখা। কিন্তু বুসানের সমুদ্রনগর তাদের থেকে অনেকটা আলাদা হবে। একটা আস্ত কংক্রীটের পাটাতনের উপর তৈরি হচ্ছে পুরো একটা শহর। আর্কিমিদিসের সূত্র এর পদার্থ বিজ্ঞানের ভিত্তি। ভাসতে থাকবে পাটাতন আর তার উপর মানুষ করবে বসত। এই উদ্যোগে হাত মিলিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম, যার পোশাকি নাম ‘ইউ এন হ্যাবিটাট’, স্থাপত্য সংস্থা ‘বিগ’ এবং প্রযুক্তি কোম্পানী ‘ওসিয়ানিক্স’। ২০১৮ সালে চলতে শুরু করা ওসিয়ানিক্স-এর কাজই হল ভাসমান ইনফ্রাস্ট্রাকচার বানানো এবং তাকে ভবিষ্যৎমুখী করে তোলা। প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে নির্মীয়মান এই ‘ওসিয়ানিক্স বুসান’ নগরে অনেকগুলো ছ’কোণা পাটাতন থাকবে, যেগুলো বাঁধা থাকবে সমুদ্রের অতলে। ভবিষ্যতে এদের লক্ষ্য দেড়লক্ষ মানুষের বাসযোগ্য নগর নির্মাণ। পরবর্তী শতকে বা সহস্রাব্দে পৃথিবীর অবস্থা কি হবে তা নিয়ে শঙ্কার মাঝেই মানুষের এই চেষ্টা প্রকৃতির পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে বসতি তৈরি করার স্বপ্নেরই প্রতিফলন। চাঁদ, শুক্রগ্রহ কিংবা মঙ্গলে বসতি মানুষ গড়তে পারবে কোনদিন কিনা জানা নেই- তবে ভাসা তো যেতেই পারে।
আকুল দরিয়ায় ভেসেই তো মানুষ পথ চলছে যুগে যুগে।