শিশুরা খুব দ্রুত নতুন দক্ষতা অর্জন করে, সব সময় তারা চেষ্টা চালিয়ে যায় এই অচেনা অজানা পৃথিবী থেকে নিরন্তর কিছু শিখতে। অন্যদিকে, প্রাপ্তবয়স্কদের একটি নতুন ভাষা শিখতে বা গণিতের কিছু বিষয় আয়ত্ত করতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। তাহলে, শিশুরা এত তাড়াতাড়ি শেখে কীভাবে? শুধু কী প্রয়োজনীয়তা, নাকি একটি শিশুর মস্তিষ্ক একটি প্রাপ্তবয়স্কের মস্তিষ্কের চেয়ে নতুন তথ্য গ্রহণ করতে বেশি সক্ষম?
আমরা সাধারণত ভাবি ‘শিশুরা স্পঞ্জের মতো’, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্রুত নতুন দক্ষতা শেখার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। শিশুদের বৌদ্ধিক বিকাশ তার জীবনের শুরুর বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এর কারণ হল নিউরোপ্লাস্টিসিটি, অর্থাৎ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মস্তিষ্কের সংযোগ বা পথের গঠন এবং কাজ পরিবর্তন করার ক্ষমতা। নিউরোপ্লাস্টিসিটির কারণে শিশুরা যেমন শেখে তেমনই প্রয়োজনে শেখাটাকে বদলে ফেলতেও পারে- যেমন তাদের অভ্যাস, দৈনন্দিন রুটিন, পন্থা প্রভৃতি। শিশুর পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত এই ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে, তখন তাদের কাছে যেকোনো ঘটনা বা অভিজ্ঞতাই অভিনব। গবেষণায় দেখা গেছে যে, জন্ম থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত, শিশুরা তাদের নিউরোপ্লাস্টিসিটি এবং বৌদ্ধিক শিখনের ক্ষেত্রে নমনীয়তার কারণে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে ভাষা শিখতে সক্ষম হয়। তারা একই সময়ে অনেকগুলো ধারণা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্তরের শিশুরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বেশি জিনিস শিখতে পারে। তবে, বাচ্চাদের দ্রুত শেখার ক্ষমতা থাকলেও, তাদের বড়োদের সহায়তা প্রয়োজন কারণ প্রাপ্তবয়স্করাই তাদের পরিবেশ এবং অভিজ্ঞতাকে পরিচালনা করে অন্যথায় শিশুদের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। ভাষা শেখার ক্ষেত্রে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে। এর কারণ হল শিশুরা তাদের স্থানীয় ভাষায় ব্যবহৃত ছন্দ এবং শব্দগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে ভাষা শেখে এবং তাই চার বছর বয়সের মধ্যে তারা দক্ষ এবং সাবলীল বক্তা হয়ে উঠতে পারে। এই ক্ষমতার ফলে ছোটো শিশুরা অনেক সহজেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা শিখে নিতে পারে।
জন্ম থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রিটিকাল পিরিয়েড বলে মনে করা হয়। এই প্রারম্ভিক বছরগুলোতে, একটি ছোটো শিশুর মস্তিষ্ক একজন প্রাপ্তবয়স্কের তুলনায় অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে কারণ শিশুটি ক্রমাগত শিখছে এবং যে কোনো প্রদত্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। একটি শিশুর শেখার এবং বোঝার ক্ষমতা তাই এই মিথস্ক্রিয়াগুলোর সাথে যুক্ত।