কিছু মানুষ কেন দ্রুত দৌড়তে পারে?

কিছু মানুষ কেন দ্রুত দৌড়তে পারে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ মে, ২০২৪

বিশ্বের দ্রুততম ব্যক্তি উসইন বোল্ট প্রতি ঘন্টায় ৩৭.৫৭ কিলোমিটার গতিতে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট দৌড়েছিলেন। যা মোটামুটি গতিতে একটা গাড়ি যখন চলে তার সমান, তবে গাড়ি এর থেকে অনেক বেশি গতিতে চলতে পারলেও খুব কম দৌড়বিদ এই গতিতে দৌড়োতে সক্ষম। টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সারসাইজ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপকরা জানিয়েছেন, কিছু মানুষ এত জোরে দৌড়তে পারেন, তার পেছনে নানা কারণ থাকে। যেমন বংশগতি, যা সন্তান তার বাবা-মার কাছ থেকে পায়। তবে এর সাথে আরও কারণ রয়েছে বলে তারা জানান। পেশিগুলোর কাজ করা, শরীরের গঠনের ওপর দ্রুত দৌড়ানোর ক্ষমতা নির্ভর করে। মানবদেহে ৬০০টার বেশি পেশি রয়েছে যা একসাথে কাজ করে মানুষকে বিভিন্ন দিকে, বিভিন্ন গতিতে যেতে দেয়। এই পেশিগুলো তন্তু দ্বারা গঠিত। দু ধরনের তন্তু রয়েছে, ফাস্ট টুইচ ও স্লো টুইচ। ফাস্ট টুইচ দৌড়তে, লাফাতে সাহায্য করে। এটা কম সময়ে দ্রুত গতিতে দৌড়তে সাহায্য করে। অন্যদিকে স্লো টুইচ ধীরগতির কাজ যেমন হাঁটার ক্ষেত্রে বেশি সময় যাবত কাজ করতে পারে। পায়ে দুধরনের পেশি রয়েছে, ফাস্ট টুইচ- গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস, যা স্প্রিন্টিং এবং লাফানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্যটা হল সোলিয়াস, যা স্লো টুইচ হাঁটতে ও জগিং-এর জন্য ব্যবহৃত হয়।
ফাস্ট-টুইচ পেশি তন্তুগুলো বড়ো হয় যা শরীরকে দ্রুত নড়াচড়া করতে এবং বেশি পরিমাণে শক্তি তৈরি করতে সহায়তা করে। স্প্রিন্টারদের ফাস্ট-টুইচ পেশি তন্তু বেশি পরিমাণে থাকে। এই ধরনের পেশি দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায়, যার জন্য উচ্চ গতিতে তুলনামূলকভাবে স্বল্প দূরত্বে মানুষ দৌড়াতে পারেন। স্লো-টুইচ পেশি তন্তু ছোটো আর ধীর গতিতে চলা ফেরা করতে সাহায্য করে, তবে তা অনেকক্ষণ যাবত সক্রিয় থাকে। দূর-দূরত্বের দৌড়বিদ এবং সাইক্লিস্টদের এই পেশিগুলো বেশি থাকে। প্রতিটি ধরণের পেশি তন্তু মানুষের শরীরে কতটা আছে তা বেশিরভাগ জিন দ্বারা নির্ধারিত হয়, তাই পেশির প্রকারের ক্ষেত্রে মানুষ যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে তা নিয়ে চলতে হবে। কিন্তু ব্যায়াম সেই পেশিগুলোকে প্রশিক্ষণ দিতে সাহায্য করতে পারে।
কঙ্কালের পেশি মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, মানুষ নিজের হাঁটাচলা সম্পর্কে চিন্তা করে তারপর শারীরিক আন্দোলন সম্পাদন করে। যেমন কতটা পদক্ষেপ নেবেন, বাহু কীভাবে নড়াচড়া করবে, পা কীভাবে মাটিতে পড়বে, শ্বাস নেওয়ার কৌশল। তবে মানুষ নিজের শরীরকে দৌড়ের কৌশলগুলো শেখাতে পারেন। যেমন সঠিক ভঙ্গি, যাতে শরীর লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর পদক্ষেপ এমনভাবে পড়ে, যাতে পা সামনের দিকে বেশি এগিয়ে আপনার গতি ধীর না করে, বরং শরীরের ঠিক নীচে পড়ে। দৌড়োনোর সময় পুরো শরীর ব্যবহার করা, যাতে বাহুগুলো পায়ের বিপরীতে যায়, পায়ের আঙ্গুলের ওপরে দৌড়োনো, উভয় পা মাটি থেকে যতটা সম্ভব তুলে ওড়ার ভঙ্গীতে বেশি সময় থাকা। সঠিক দৌড়ের কৌশল পেশিগুলোকে আরও শক্তি তৈরি করতে আর একসাথে কাজ করতে সহায়তা করে, যা দ্রুত দৌড়োতে সহায়তা করে। যত বেশি অনুশীলন করবেন, তত ভালো আপনি দৌড়তে পারবেন, আর ক্রমশ দ্রুত দৌড়ানোর ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে নিজেকে আরও উজাড় করে নিজের দৌড়নোর ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে বাড়াতে পারেন।