শীতকালে অ্যান্টার্কটিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দ্বিগুণ আয়তনের এলাকা জুড়ে সমুদ্রের পৃষ্ঠে বরফ জমে যায়। শক্তিশালী উপকূলীয় বাতাস মহাদেশ থেকে উড়ে গিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে, স্থানে স্থানে সমুদ্র পৃষ্ঠের বরফের আস্তরণ সরিয়ে দিয়ে নীচের সমুদ্রের জলকে উন্মুক্ত করে। বরফ সরে গিয়ে জল উন্মুক্ত হওয়া পলিনিয়া নামে পরিচিত। কিন্তু উপকূল থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে যেখানে সমুদ্র হাজার হাজার মিটার গভীর, সেখানে ভূভাগ থেকে বাতাস এসে সমুদ্র পৃষ্টের বরফে এই পলিনিয়া তৈরি হওয়া কঠিন। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কীভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠে এই ওপেনিং, বা পলিনিয়া তৈরি হয়। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়, গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দল মউড রাইজ পলিনিয়া অধ্যয়ন করেছেন। এই পলিনিয়ার নাম ওয়েডেল সাগরে নিমজ্জিত পাহাড়ের বৈশিষ্ট্যের অনুসারে, যার ওপরে এই পলিনিয়া বৃদ্ধি পায়। তারা দেখতে পান যে পলিনিয়া বায়ু, সমুদ্রের স্রোত এবং সমুদ্রের তলদেশের অনন্য ভৌগোলিক অবস্থার জটিল মিথস্ক্রিয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের দিকে তাপ এবং লবণ পরিবহন করে। ২০১৬, ২০১৭-তে, ওয়েডেল সাগরের চারপাশে বৃহৎ বৃত্তাকার সমুদ্রের স্রোত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যার ফলে গভীর থেকে উষ্ণ, লবণাক্ত জল উঠে আসে, আর লবণ ও তাপ উল্লম্বভাবে ভূপৃষ্ঠের জলের সাথে মিশে যায় যার ফলস্বরূপ বরফ গলে যায়।
গথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, এতে সমুদ্রের বরফ গলার একটা আপাত ব্যাখ্যা করা যায়, কিন্তু সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের জল সতেজ হয়ে ওঠে৷ যার ফলে তাপ ও লবণ মিশ্রণ কমে যাবে ফলে আবার বরফ জমবে। তাহলে পলিনিয়া গঠন হওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। গবেষকরা দূরবর্তীভাবে সংবেদিত সমুদ্রের বরফের ম্যাপিং, সমুদ্রের গণনামূলক মডেল, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখতে পান ওয়েডেল সাগরের স্রোত মউড রাইজের চারপাশে প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে অশান্ত ঢেউ সমুদ্রের শীর্ষে লবণ নিয়ে আসছে। ” একম্যান পরিবহন” নামক একটা প্রক্রিয়া লবণ মউড রাইজের উত্তর দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল, যেখানে পলিনিয়া প্রথম গঠিত হয়েছিল। তাদের মতে এই প্রক্রিয়া পলিনিয়া গঠনে ভূমিকা পালন করে। পলিনিয়া সমুদ্র এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে তাপ এবং কার্বন স্থানান্তর করেন। এত বেশি যে তারা সেই অঞ্চলের তাপ এবং কার্বন পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, পলিনিয়া গঠনের পরে একাধিক বছর ধরে তাদের ছাপ জলে থাকতে পারে। পলিনিয়া জলের স্রোতের গতিপথ, বা স্রোত কীভাবে মহাদেশের দিকে তাপ বহন করে তা পরিবর্তন করতে পারে। তাছাড়া এখানে যে ঘন জল তৈরি হয় তা বিশ্ব মহাসাগর জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।