তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ুর ধরন পরিবর্তনের সাথে সাথে গ্রীষ্মমন্ডলীয় থেকে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত উন্নত বিশ্বের বড়ো বড়ো শহর উই পোকার আখড়া হয়ে উঠবে। এদের কবল থেকে লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিস, টোকিও, সাও পাওলো কেউই রক্ষা পাবেনা। নিওবায়োটা-তে প্রকাশিত গবেষণায়,. ইভোল্যুশনারি বায়োলজি অ্যান্ড ইকোলজি ল্যাব, ইউনিভার্সিটি লিব্রে ডি ব্রুকসেলস এর পি এইচ ডি ছাত্র এডুয়ার্ড ডুকসনে এবং অধ্যাপক ডেনিস ফোর্নিয়ার এই সমস্ত নতুন অঞ্চলে আক্রমণাত্মক উইপোকার সম্ভাব্য সম্প্রসারণের এক দৃশ্য উন্মোচন করেছেন। সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুর সাথে অভ্যস্ত উইপোকা কীভাবে তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলের বাইরে শহরে তাদের জনসংখ্যা বিস্তার করছে তার উত্তরে গবেষকরা জানিয়েছেন, আধুনিক বিশ্বের আন্তঃসংযুক্ততা এর কারণ। নগরায়ন, প্রচুর জনসংখ্যা, নানা ব্যস্ত বাণিজ্যিক পথের নেটওয়ার্ক, উইপোকার আক্রমণের জন্য নিখুঁত প্রজনন স্থল রচনা করে। সারা বিশ্ব জুড়ে মালপত্রের আমদানি রপ্তানি, জাহাজে করে কাঠের আসবাবপত্র পরিবহনের সময় এই ছোটো ছোটো কীটগুলো নিঃশব্দে এক স্থান থেকে অন্যত্র, তারপর আমাদের বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে।
ডুকেসনে এবং ফোর্নিয়ারের গবেষণা আমরা যেভাবে আক্রমণাত্মক প্রজাতির মোকাবিলা করে থাকি, তার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে। উইয়ের বিস্তার সহজতর হওয়ার জন্য বাণিজ্য, পরিবহন এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের মতো নানা ধরনের সংযোগকে একত্রিত করে, তাদের মিথস্ক্রিয়া অধ্যয়ন করার গুরুত্ব তারা তুলে ধরেছেন। তারা এই ফলাফলের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারক এবং নাগরিকদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তার মধ্যে একটা হল জলবায়ু অঞ্চল নির্বিশেষে প্রধান শহরগুলোর ঘরবাড়ি এবং অবকাঠামো রক্ষার জন্য উই পোকা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদারভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। গবেষকরা বলছেন, সাধারণ বাসিন্দারাই পরিবেশের সজাগ রক্ষীতে পরিণত হতে পারেন। তার জন্য, iNaturalist-এর মতো এআই-সহায়তা অ্যাপের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন, যার সাহায্যে নাগরিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। iNaturalist প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে সাহায্য করার জন্য জীববৈচিত্র্যের তথ্য জানানোর একটা সামাজিক নেটওয়ার্ক। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল মানুষকে প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত করা, এবং দ্বিতীয় লক্ষ্য হল ব্যক্তিগত ভাবে বৈজ্ঞানিকভাবে মূল্যবান জীববৈচিত্র্য তথ্য তৈরি করা। দ্রুত পরিবর্তিত জলবায়ুতে আক্রমণাত্মক উইয়ের হুমকির বিরুদ্ধে লড়তে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সক্রিয় পদক্ষেপ আমাদের সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা দেবে।