গ্রহের অন্ধকার কোণে, যেখানে সূর্যের আলো কখনও পৌঁছোয় না, এক অদ্ভুত আভা দেখতে পাওয়া যায় যা ওই ছায়াঘেরা পরিবেশকেও আলোকিত করে তোলে। এই প্রক্রিয়াকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বায়োলুমিনেসেন্স বলে যা পৃথিবীতে জীবনের ইতিহাসে অন্তত ৯৪ বার আলাদাভাবে বিবর্তিত হয়েছে। প্রাণীদেহে জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়ায় আলো নিঃসৃত হবার ঘটনাকেই বায়োলুমিনেসেন্স বা জৈব দ্যুতি বলে। বায়োলুমিনেসেন্ট জীব রাসায়নিক বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে তাদের নিজস্ব একটি আভা তৈরি করতে পারে, যা তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগায়। বর্তমানে, বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেছেন প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে ক্যামব্রিয়ান যুগে সমুদ্রের গভীরে অক্টোকোরালিয়া নামক এক শ্রেণীর প্রবালে এটি দেখা গিয়েছিল। পূর্ববর্তী সূত্রে জানা গিয়েছিল ২৬৭ মিলিয়ন বছর আগে গভীর-সমুদ্রে বসবাসকারী এক ক্ষুদ্র ক্রাস্টেসিয়ানের এই ক্ষমতা ছিল। স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন এবং ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ডিলিও বলেছেন তারা বায়োলুমিনিসেন্সের উৎপত্তির সময়ের হদিশ জানতে চেয়েছিলেন এবং অক্টোকোরাল হল পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাণীদের মধ্যে একটি যার জৈব দ্যুতি তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল কখন তাদের এই ক্ষমতার বিকাশ ঘটেছিল? অক্টোকোরাল বড়ো আকর্ষণীয় প্রাণী। অন্যান্য প্রবালের মতো, এরা পলিপ দিয়ে গঠিত যা একত্রে একটি উপনিবেশ তৈরি করে। প্রায়শই তাদের ক্যালসিফাইড নিঃসরণ দিয়ে তৈরি একটি কাঠামোতে তারা বাস করে। তবে অক্টোকোরালের শরীর অন্যান্য প্রবালের তুলনায় নরম প্রকৃতির। এদের মধ্যে কিছু প্রবালকে যখন বিরক্ত করা হয় বা উত্তেজিত করা হয় তখন তারা বায়োলুমিনিসেন্সের কারণে জ্বলজ্বল করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে এরা শিকারকে আকর্ষণ করা বা তাদের প্রলোভন দেখাতে অথবা যে সব ছোটো মাছ প্রবাল খায় বা প্রবালের ক্ষতি করে তাদের প্রতি শিকারীদের দৃষ্টি অকর্ষণ করতে এই জৈব দ্যুতি ছড়ায়। গবেষকের দলটি বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে সমস্ত অক্টোকোরালের সাধারণ পূর্বপুরুষে বায়োলুমিনিসেন্স প্রথম দেখা গিয়েছিল।