সারা পৃথিবী বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, পৃথিবীর গড় উত্তাপ ১.১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে, পৃথিবীর সাগর-মহাসাগরের জলস্তর প্রতি বছর ৩.৭ মিলিমিটার হারে ফুলে উঠেছে, বিগত ১৭৪ বছরের ইতিহাসে পৃথিবীর উষ্ণতম বছর ছিল ২০২৩ সাল, ১৮৫০-১৯০০ সালের গড়ের তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণতা যদি দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বাড়ে, তবে বাস্তুতন্ত্রে বড়ো ধরনের আঘাত লাগবে। বহু আলোচনার পরও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার অপ্রতিরোধ্য। এতদিন জানা ছিল যে তুন্দ্রা অঞ্চল হল একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্বন সিঙ্ক, কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সেখানেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। ঐতিহ্যগতভাবে কার্বন সংরক্ষণের জন্য পরিচিত, এই বিশাল, ঠান্ডা অঞ্চলগুলো এখন কার্বন নিঃসরণ করছে এবং সম্ভাব্য জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য, বিভিন্ন দেশের ৭০ জন বিজ্ঞানীর একটি দল বিশ্বব্যাপী ২৮ টি তুন্দ্রা অঞ্চলে ওপেন-টপ চেম্বার (OTCs) তৈরি করেছেন। ওটিসি অনেকটা মিনি-গ্রিনহাউসের মতো কাজ করে, কার্যকরভাবে তাপ আটকে রাখে, বাতাসকে আটকিয়ে একটি স্থানীয় উষ্ণায়ন প্রভাব তৈরি করে। ফলস্বরূপ, এই পদ্ধতির ফলে বাতাসের তাপমাত্রা ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মাটির তাপমাত্রা ০.৪ ডিগ্রি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়াও মাটির আর্দ্রতা ১.৬% হ্রাস পায় এবং তুন্দ্রা অঞ্চলের কার্বন সিঙ্ক হিসাবে কাজ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। পরীক্ষামূলকভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি তুন্দ্রার ইকোসিস্টেম রেসপিরেশনকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে, প্রায় ৩০% বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে তাদের বৃদ্ধি বা বেড়ে ওঠার মরসুমে। ইকোসিস্টেম রেসপিরেশন হল একটি নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রে জীবিত প্রাণীদের দ্বারা সংঘটিত শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ার সমষ্টি। এর কারণ হল মাটিতে বসবাসকারী জীব এবং উদ্ভিদের বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধি পূর্বের অনুমানের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি, যদিও এটি সময় এবং অবস্থানের সাথে পরিবর্তিত হয়। গবেষণায় আরও জানা গেছে যে বাস্তুতন্ত্রের শ্বসন বৃদ্ধি স্থানীয় মাটির অবস্থার সাথে পরিবর্তিত হয়। নাইট্রোজেনের মাত্রা এবং মাটির pH এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর থেকে স্পষ্ট হয় যে সমস্ত তুন্দ্রা অঞ্চল উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অভিন্নভাবে সাড়া দেয় না। গবেষকদের মতে কিছু এলাকা, বিশেষ করে সাইবেরিয়া এবং কানাডার কিছু অংশ, উষ্ণায়নের প্রতি বেশি সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে। এই বিষয়ে গবেষকরা আরও অধ্যয়ন করার পরিকল্পনা করেছেন যে কীভাবে এই পরীক্ষামূলক অঞ্চলগুলো সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। তারা নতুন অবস্থান অন্তর্ভুক্ত করে তাদের পরীক্ষাকে আরও বিস্তৃত করার আশা রাখেন। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র এবং জলবায়ু ব্যবস্থার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এই অধ্যয়নটি অপরিহার্য। তাছাড়াও গবেষণাটি তুন্দ্রা অঞ্চলের অনুসন্ধান এবং পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।