খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আইবিএস নিয়ন্ত্রণ করে

খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আইবিএস নিয়ন্ত্রণ করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস কোনো জটিল অসুখ নয়৷ পেট গুড় গুড় করা বা পেটব্যথা-গ্যাস কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটখারাপ হল এর উপসর্গ। কখন উপসর্গ তীব্র আবার কখন সব কিছু হঠাৎ ঠিক হয়ে যায় বোঝা মুশকিল৷ চিকিত্সার মধ্যে প্রায়শই খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন থাকে যেমন অল্প পরিমাণে ঘন ঘন খাবার খাওয়া এবং কফি, অ্যালকোহল বা সোডা মিশ্রিত ঠাণ্ডা পানীয় এড়িয়ে চলা। রোগীদের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ যেমন গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, ফোলাভাব বা পেটে ব্যথার ক্ষেত্রে ওষুধ দেন চিকিৎসকেরা। কখনও কখনও আইবিএস-এর লক্ষণ উন্নত করতে এন্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহৃত হয়। আইবিএস তাই গঠনগত সমস্যা নয়, ফাংশনাল ডিজ়অর্ডার। খাদ্যনালী, নার্ভ-সহ সার্বিক ভাবে গোটা শরীরের সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। সেখান থেকেই সিগনাল আসে ও তার ফলে বাওয়েল মুভমেন্ট হয় দ্রুত। কিন্তু এই সিগনালিংয়েই ফাংশনাল সমস্যা থাকলে তৈরি হয় আইবিএস। গবেষণায় তিন ধরনের চিকিত্সার তুলনা করা হয়েছে: দুটি খাদ্যতালিকাগত এবং একটি ওষুধ ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে। গুরুতর বা মাঝারি আইবিএস লক্ষণ সহ প্রাপ্তবয়স্ক রোগীরা এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। প্রথম দলটিকে বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, যা ‘লো-ফডম্যাপ’ নামে পরিচিত। যে সব খাবারে ওলিগোস্যাকারাইড, ডাইস্যাকারাইড ও পলিওল নামের কার্বোহাইড্রেট কম আছে, সেটাই হল ‘লো–ফডম্যাপ’ খাবার৷ রোগীদের ‘হাই ফডম্যাপ’ খাবার, যেমন গম, রাই, পেঁয়াজ, রসুন, দুধ, ইয়োগার্ট, নরম চিজ, মিষ্টি খাবার যেমন মধু, লো–ক্যালোরি সুইটনার প্রভৃতি এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছিল। কারণ দেখা গিয়েছে, এই সব খাবারের মধ্যে কারও একটিতে সমস্যা হয়, কারও হয় একাধিকে৷ তবে কম করে খেলে সচরাচর বিপদ হয় না৷ দ্বিতীয় দলটিকে কার্বোহাইড্রেট কম এবং প্রোটিন এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার আনুপাতিকভাবে উচ্চ মাত্রায় দেওয়া হয়। তৃতীয় দলে, রোগীদের আইবিএস লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ওষুধ দেওয়া হয়। দেখা গেছে যারা লো-ফডম্যাপ অনুসরণ করে তাদের মধ্যে ৭৬%-এর রোগের লক্ষণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কম কার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চ প্রোটিন এবং ফ্যাট খাবার খাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭১%-এর এবং ওষুধের উপর নির্ভরশীল দলের ৫৮%-এর উপসর্গ হ্রাস পায়। এই গবেষণার মাধ্যমে, দেখা গেছে যে আইবিএস-এর চিকিৎসায় ডায়েট একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, কিন্তু বেশ কিছু বিকল্প চিকিৎসা কার্যকরী। ডায়েট ছাড়াও জীবনযাপনের ধারায় পরিবর্তন আনা দরকার। ব্যায়াম, প্রাণায়াম, হাঁটাহাঁটি ও রোজ ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ওষুধের মাধ্যমে আইবিএসের সমস্যা মেটানোর উপায় সাময়িক। এই সমস্যাকে একেবারে নির্মূল করতে সার্বিক ভাবে বদল আনা দরকার জীবনযাপনে। এর পাশাপাশি মানসিক ভাবে ভালো থাকার ইচ্ছেটাও খুব জরুরি।