সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন সমীক্ষা অনুসারে, চিনে অবস্থিত প্রায় অর্ধেক বড়ো বড়ো শহর ডুবে যাচ্ছে, এবং সেখানে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ স্থানীয় বাসিন্দা বন্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে চিনের ৪৫% শহরাঞ্চলে, ৩ মিলিমিটারের মতো স্থলভূমি প্রতি বছর দ্রুত ডুবে যাচ্ছে, আর ১৬% অঞ্চল বছরে ১০ মিমি এর বেশি হারে ডুবে যাচ্ছে। গবেষকরা প্রায় ৮২টির মতো চিনের শহর পর্যবেক্ষণ করেছেন যেখানে ২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বসবাস করে এবং স্যাটেলাইট থেকে র্যাডার পালসেস ব্যবহার করে উপগ্রহ ও মাটির মধ্যে দূরত্বের পরিবর্তন শনাক্ত করেছেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে তারা পরিমাপ করেছেন কীভাবে ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে শহরগুলোর উচ্চতা পরিবর্তিত হয়েছিল। তারা দেখেন যে চিনের বৃহত্তম শহর, সাংহাই, বিগত ১০০ বছরে প্রায় ৩ মিটার ডুবে থাকা সত্ত্বেও সময়ের সাথে সাথে তার আরো পতন ঘটছে। বেইজিং এবং তিয়ানজিনের মতো শহরগুলোও বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে।এই ডুবে যাওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে, তবে ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু অভিযোজন বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট নিকোলস বিশ্বাস করেন যে এর প্রধান কারণ হল সম্ভবত জল নিষ্কাশন। চিনে এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে পলি জমা হয়েছে, তাই যখন ভূগর্ভস্থ জল বের করা হয় বা মাটি নিষ্কাশন করা হয় তখন সে অঞ্চলগুলোর পতন হতে থাকে। সুতরাং গবেষণাপত্রে সমস্যাটির সমাধানের জন্য ভূগর্ভস্থ জল নিষ্কাশনে নিয়ন্ত্রণ আনার কথা বলা হয়েছে। গবেষকরা এও মনে করেন যে এর ফলে স্থল্ভূমির গঠনগত পরিবর্তন হচ্ছে, এবং বন্যার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশেষ করে উপকূলীয় শহরগুলোতে। তবে সমস্যাটি শুধু চিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত অন্য একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে সারা বিশ্বের প্রায় ৬.৩ মিলিয়ন বর্গ কিমি বা প্রায় ২.৪ মিলিয়ন বর্গ মাইল স্থলভূমি ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া একটি। ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫টি রাজ্য জুড়ে ১৭,০০০ বর্গমাইলের বেশি জমি সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে। এবং এটি ঘটেছে ভূগর্ভস্থ জল নিষ্কাশনের কারণে। গবেষকরা তাই সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চাইছেন।