রোগা হতে অনেকেই আজকাল ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ করে থাকেন। ডায়েটের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। তবে দ্রুত ওজন ঝরাতে অনেকেই ১৪ কিংবা ১৬ ঘণ্টার বিরতিতে খাওয়ার এই ডায়েট বেছে নেন। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলেই তাড়াতাড়ি ওজন ঝরবে, এই ধারণা রয়েছে অনেকেরই। তবে গবেষকদের মতে এই ধরনের উপোস অন্ত্র এবং মস্তিষ্ক উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটায়। চিনের গবেষকরা ২৫ জন স্থূল ব্যক্তিকে নিয়ে ৬২ দিন ধরে তাদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই সময়ে তারা ইন্টারমিটেন্ট এনার্জি রেস্ট্রিকশন (IER) প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল যেখানে কিছুদিন তারা ক্যালোরি মেপে খাদ্য গ্রহণ করেছিল এবং কিছুদিন কিছু সময়ের জন্য উপোস করেছিল। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের শরীরের ওজন গড়ে ৭.৮% হ্রাস পেয়েছিল এবং মস্তিষ্কের স্থূলতা-সম্পর্কিত অঞ্চলের কার্যকলাপে এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছিল। এই পরিবর্তনের কারণ এই মুহূর্তে পরিষ্কার নয় আর অন্ত্র মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করছে নাকি মস্তিষ্ক অন্ত্রকে প্রভাবিত করছে সেটিও স্পষ্ট নয়। তবে এটা স্পষ্ট যে অন্ত্র এবং মস্তিষ্ক ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বা সংযুক্ত, তাই মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অঞ্চল যা খাদ্য গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করে তার চিকিত্সায় স্থূলতা হ্রাস পেতে পারে। ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (fMRI) স্ক্যানের মাধ্যমে দেখা যায় মস্তিষ্কের যে অঞ্চল ক্ষুধা এবং আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করে সেই অঞ্চল মস্তিষ্কের কার্যকলাপের পরিবর্তন ঘটছে। তাছাড়াও অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের পরিবর্তন, যা ব্যক্তিদের মলের নমুনা এবং রক্তের পরিমাপের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোর সাথে যুক্ত ছিল। গবেষকরা মনে করেন অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম একটি জটিল, দ্বিমুখী উপায়ে মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম নিউরোট্রান্সমিটার এবং নিউরোটক্সিন তৈরি করে যা স্নায়ু এবং রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। বিনিময়ে মস্তিষ্ক খাওয়ার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে, আর আমাদের খাদ্যের পুষ্টি অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের গঠন পরিবর্তন করে। বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ আজ স্থূলতায় আক্রান্ত যার ফলে ক্যান্সার থেকে হৃদরোগ পর্যন্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের মস্তিস্ক এবং অন্ত্র কীভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল সেই জ্ঞান কার্যকরভাবে স্থূলতা প্রতিরোধ এবং হ্রাস করার ক্ষেত্রে একটি বিশাল পার্থক্য এনে দিতে পারে।