সামুদ্রিক ট্রান্সফর্ম ত্রুটি কার্বনডাইঅক্সাইড-এর উল্লেখযোগ্য উৎস। উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশন (ডব্লিউএইচওআই) এর সামুদ্রিক রসায়ন ও ভূ-রসায়ন বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ফ্রিডার ও তার সহকর্মীরা ব্রাজিলের উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ কিমি দূরে সেন্ট পিটার এবং সেন্ট পল দ্বীপপুঞ্জের সামুদ্রিক ট্রান্সফর্ম ফল্টের নিমজ্জিত শিলার সীমানা বিশ্লেষণ করে, ভূতাত্ত্বিক কার্বন চক্রের এই তথ্য জানিয়েছেন। ভূত্বকের ওপরের পাথরের আবরণ ভুত্বকের নীচে ম্যান্টেলের পরিচলন স্রোতের কারণে স্থানচ্যুত হয়। গরম ম্যাগমা উত্তপ্ত হয়ে ওপরে ওঠে, তারপর ঠান্ডা হলে ডুবে যায় তার ফলে টেকটোনিক প্লেটগুলো সরে যায়। ট্রান্সফর্ম ফল্ট ঘটে যখন দুটো টেকটোনিক প্লেট একে অপরকে অতিক্রম করে চলে যায়। পৃথিবীর তিনটে প্রধান প্লেটের সীমানার মধ্যে একটা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪৮০০০ কিমি দৈর্ঘ্য, অন্যগুলো হল মিড ওশেনিক রিজ সিস্টেম (প্রায় ৬৫০০০ কিমি দীর্ঘ) এবং সাবডাকশন জোন (প্রায় ৫৫০০০ কিমি দীর্ঘ)।
মিড ওশেনিক রিজ বা মধ্য-সমুদ্রের শৈলশিরা এবং সাবডাকশন জোনে কার্বন সাইক্লিং কয়েক দশক ধরে অধ্যয়ন করা হয়েছে। সামুদ্রিক ট্রান্সফর্ম ফল্টগুলোর সাথে কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গমন নিয়ে বিশেষ অধ্যয়ন করা হয়নি। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সে-এ গবেষকরা জানিয়েছেন, সামুদ্রিক ট্রান্সফর্ম ফল্টগুলোতে উন্মোচিত ম্যান্টেল শিলাগুলো কার্বনডাইঅক্সাইড-এর জন্য একটা সম্ভাব্য বিশাল সিঙ্ক। ম্যান্টল আংশিক গলে গিয়ে কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গত করে যা হাইড্রোথার্মাল তরলে প্রবেশ করে, সমুদ্রতলের কাছাকাছি ম্যান্টলের সাথে বিক্রিয়া করে সেখানে আটকে পড়ে। দেখা যাচ্ছে সমুদ্রতল গঠনের ত্রুটি থেকে প্রচুর কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গত হয়। তবে মানুষের কর্মকাণ্ড থেকে সৃষ্ট কার্বনডাইঅক্সাইড-এর পরিমাণের তুলনায় ট্রান্সফর্ম ফল্টে নির্গত কার্বনডাইঅক্সাইড -এর পরিমাণ নগণ্য। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক সময়কালে মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার শুরু করার আগে ভূতাত্ত্বিক গঠনের ট্রান্সফর্ম ফল্ট পৃথিবীর জলবায়ুর এক প্রধান চালিকা শক্তি ছিল।
বর্তমানে মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, ধরন বোঝার জন্য, অতীতে পৃথিবীর প্রাকৃতিক জলবায়ুর অবস্থা বোঝা প্রয়োজন, যা প্রাকৃতিক কার্বন চক্রের বিশৃঙ্খলার সাথে যুক্ত। গবেষকরা পৃথিবীর আবরণ এবং মহাসাগর বা বায়ুমণ্ডল সিস্টেমের মধ্যে কার্বনের দীর্ঘকালীন প্রবাহ সম্পর্কে জানিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই ধরনের কার্বন প্রবাহের বড়ো পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর জলবায়ু উষ্ণ বা ঠান্ডা হয়েছে।