২০০৭ সালে, আমাজনিয়ান শহর পোর্তো ভেলহোর কাছে সোনা খননকারীরা খননকাজ চালাতে গিয়ে এক জীবাশ্মের অবশেষ খুঁজে পেয়েছিলেন। পরে গবেষকরা নির্ধারণ করেছিলেন যে ঐ অবশিষ্টাংশ কচ্ছপের নীচের চোয়ালের অংশ, যা আকারে বেশ বড়ো। মেরুদণ্ডী জীবাশ্মবিদ গ্যাব্রিয়েল ফেরেরা, এবং তার সহকর্মীরা সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে জীবাশ্মের চোয়ালের হাড় পরিমাপ করে, জীবিত এবং বিলুপ্ত উভয় কচ্ছপের সাথে এর তুলনা করেন। কচ্ছপের আকার এবং আকৃতির উপর ভিত্তি করে, তারা নির্ধারণ করেছিলন এটা কচ্ছপের এক নতুন প্রজাতি। গবেষকরা এই কচ্ছপের নাম দিয়েছেন পেল্টোসেফালাস ম্যাটুরিন – “ম্যাটুরিন” হল লেখক স্টিফেন কিং এর বিশাল, মহাজাগতিক এক কচ্ছপ চরিত্র, যে মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছে। এটা জলজ বড়ো মাথার আমাজন নদীর কচ্ছপ (পেল্টোসেফালাস ডুমেরিলিয়ানাস) এর নিকটাত্মীয়। এখনও জীবিত এই বড়ো মাথার কচ্ছপের আকার ম্যাটুরিন-এর তুলনায় অনেক ছোটো, এর খোলসের দৈর্ঘ্য ৫০ সেন্টিমিটারেরও কম। সেখানে ম্যাটুরিন-এর চোয়ালের হাড় থেকে বোঝা যাচ্ছে এই কচ্ছপ বেশ বড়ো এবং এর খোলসের দৈর্ঘ্য ২ মিটারের কাছাকাছি। এটা আকারে মিষ্টি জলের কচ্ছপদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। প্রায় ৯০০০ বছর আগে সোফার মতো মাপের এই ধরনের কচ্ছপ ব্রাজিলের আমাজন নদীতে সাঁতার কাটত। আর এই বিরাটাকার কচ্ছপের অস্তিত্ব আধুনিক সময়ের বেশ কাছাকাছি সময় অবধি ছিল। এই নতুন প্রজাতির কচ্ছপের কথা গবেষকরা বায়োলজি লেটার্সে রিপোর্ট করেছেন।
গবেষকরা রেডিওকার্বন এবং জীবাশ্মের ভূ-রাসায়নিক বিশ্লেষণ থেকে জানান এটা ৪০০০০ থেকে ৯০০০ বছর আগে বাস করত। এই সময় এত সম্প্রতি যে দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসকারী লোকেরা হয়তো এই কচ্ছপের সম্মুখীন হয়েছিলেন, কারণ দক্ষিণ আমেরিকায় ১১০০০ বছর আগে মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। সাধারণত এরকম বড়ো আকারের মিষ্টি জলের দৈত্যাকার কচ্ছপদের এত সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যেত না, এদের বহু বছর আগে দেখা যেত। স্টুপেনডেমিস, সবচেয়ে বড় মিষ্টি জলের কচ্ছপ পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় বাস করত।
২০২৩ সালে, ফেরেরা ও অন্যান্য গবেষকরা কচ্ছপের দেহের আকারের বিবর্তনের ওপর একটা বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছিলেন, যাতে বলা হয়েছিল যে মিষ্টি জলের কচ্ছপ বিবর্তনকালীন সময়ে বেশিরভাগ সমআকারসম্পন্ন হত তবে মাঝে মাঝে খুব বড়ো প্রজাতি দেখা যেত। কিছু গবেষকের মতামত ছিল কচ্ছপের দেহের আকার পরিবেশের তাপমাত্রার জন্য প্রভাবিত হতে পারে। কিন্তু ফেরেরা জানিয়েছেন, তারা কচ্ছপের গড় বা সর্বোচ্চ শারীরিক আকার প্রভাবিত করার কারণে হিসেবে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি, ফলে অতীতে দৈত্যাকার কচ্ছপদের বিবর্তনের কারণ এখনও অজানা।