জার্মানির গবেষকদের এক নতুন সমীক্ষা অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে খাদ্য দ্রব্যের দাম প্রতি বছর ৩.২% বৃদ্ধি পেতে পারে৷ জলবায়ু পরিবর্তনে পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে, আর এই মূল্যস্ফীতি বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ানোর মতোই চড়া। যারা সব দিক থেকে আয়ের তুলনায় ভারী হওয়া খরচের বোঝায় কোণঠাসা তাদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবারের অভাব হবে তাই নয় পর্যাপ্ত খাবারও থাকবে না। নতুন বিশ্লেষণ দেখায় ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে খাদ্য দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি প্রতি বছর ০.৯ থেকে ৩.২ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেতে পারে। একইসঙ্গে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি ০.৩ থেকে ১.২ % পয়েন্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে সুতরাং পরিবারের আয়ের একটি বড়ো অংশ খাদ্য দ্রব্য কেনার জন্য ব্যয় করতে হবে। এই প্রভাব বিশ্বব্যাপী উচ্চ এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় একইভাবে অনুভূত হবে, বিশেষ করে পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আফ্রিকার ভূমিকা সামান্য কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে আফ্রিকা। ইন্টার গভর্মেন্টাল প্যানেল অফ ক্লাইমেট চেঞ্জ পশ্চিম আফ্রিকাকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি “হটস্পট” হিসাবে বর্ণনা করেছে যেখানে চরম ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং অতিরিক্ত কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ঘানা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এখানকার জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি সরাসরি বৃষ্টিনির্ভর কৃষির উপর নির্ভরশীল । জলবায়ু-সম্পর্কিত খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে দুটি আন্তঃসংযুক্ত সমস্যায় ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমটি হল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মুদ্রাস্ফীতির কারণ হয়ে উঠছে এবং তা ইতিমধ্যে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঋতু পরিবর্তন করছে ফলত ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার অন্যদিকে কীটপতঙ্গ এবং রোগের প্রাদুর্ভাবে গবাদি পশু এবং খাদ্যপণ্য মজুত রাখার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে রাস্তা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ফলত গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলোর কাছে খাদ্য দ্রব্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সমস্ত কারণ মূল্যবৃদ্ধি বাড়িয়ে তুলে পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে। এই সমস্যার দ্বিতীয় অংশ হল ৩% বার্ষিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবারগুলো তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে অক্ষম হয়ে পড়বে। সম্ভবত খাদ্যের গুণমান বা গুরুত্বপূর্ণ খাবারের সাথে তাদের আপোস করতে হবে। ফলস্বরূপ মানুষ রোগে আক্রান্ত হবে, বিশ্বব্যাপী বেশ কিছু মানুষ আরও পুষ্টিহীনতায় ভুগবে। গবেষকদের মতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস বিশ্ব অর্থনীতিতে যে কোনও প্রভাবকে সীমিত করতে পারে। তাছাড়াও খাদ্য এবং আয় উভয়ের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পেলে এইধরনের সম্প্রদায় সুরক্ষিত থাকবে। সেক্ষেত্রে সরকারী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।