একবার কল্পনা করুন যখনই আপনি কোনো মুখের দিকে দেখছেন সেটি বিকৃত দেখাচ্ছে। প্রসোপোমেটামরফপসিয়া (পিএমও) নামে পরিচিত খুব বিরল চাক্ষুস করার এই ব্যাধির কারণে মুখের বৈশিষ্ট্যগুলো বিকৃত দেখায়। অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। ‘প্রোসোপো’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘প্রোসোপন’ অর্থাৎ মুখ থেকে আর ‘মেটামরফপসিয়া’- অনুধাবনগত বিকৃতিকে বোঝায়। রোগের নির্দিষ্ট লক্ষণ ক্ষেত্র বিশেষে পরিবর্তিত হয় এবং আকৃতি, আকার, রঙ, এবং মুখের বৈশিষ্ট্যের অবস্থান প্রভাবিত করতে পারে। পিএমও- এর সময়কালও ভিন্ন ভিন্ন হয়- এটি দিন, সপ্তাহ এমনকি বছর ধরে চলতে পারে। দ্য ল্যানসেটের “ক্লিনিক্যাল পিকচার্স” বিভাগে প্রকাশিত এই গবেষণা পিএমও-তে আক্রান্ত রোগীর এই ঘটনা রিপোর্ট করেছে। এই গবেষণায় পিএমও আক্রান্ত এক ব্যক্তি কীভাবে অন্য ব্যক্তির মুখ বিকৃতভাবে দেখছে তার ফটোরিয়ালিস্টিক ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রদান করছে যা একেবারে প্রথম। ৫৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি যখন অন্য ব্যক্তির মুখ পর্দায় বা কাগজে দেখছে তখন তিনি তা বিকৃত অবস্থায় দেখছেন না, তবে তিনি যখন সেই ব্যক্তিকে সামনাসামনি চাক্ষুস দেখছেন তখন তার মুখ দানবের মতো বিকৃত দেখাচ্ছে। বেশিরভাগ পিএমও আক্রান্ত রোগীরা সব ক্ষেত্রেই মুখের বিকৃতি দেখতে পায়, তাই এই ব্যক্তির ঘটনাটি বেশ ভিন্ন। গবেষণার জন্য, গবেষকরা একজন ব্যক্তির মুখের একটি ছবি তুলেছিলেন। তারপরে, তারা রোগীকে একটি কম্পিউটারের স্ক্রিনে ব্যক্তিটির ছবি দেখায় আর সাথে সাথে একই ব্যক্তির আসল চেহারাও তিনি দেখেন। গবেষকরা রোগীর কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে পারেন কীভাবে স্ক্রিনের মুখ এবং তার সামনের আসল মুখটি আলাদা, এরপর তারা রোগীর দ্বারা অনুভূত বিকৃতির সাথে মিলিয়ে কম্পিউটার সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ফটোগ্রাফটি পরিবর্তন করেন। এই ঘটনায় রোগীর স্ক্যানে দেখা গেছে তার হিপোক্যাম্পাসের উপরের বাঁ দিকে একটি ছোটো এক সেন্টিমিটারের মতো লম্বা ক্ষত রয়েছে। পূর্বে, প্রসোপোমেটামরফপসিয়াকে মুখের অন্ধত্ব বা প্রসোপাগ্নোসিয়া হিসাবে বিবেচনা করা হত। তবে ধীরে ধীরে, এটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে দুটি ঘটনা একসাথে নাও ঘটতে পারে, এবং উভয়ের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া শুধুমাত্র আংশিকভাবে ওভারল্যাপ করে। প্রসোপোমেটামরফপসিয়াকে বর্তমানে একটি চাক্ষুষ বিকৃতি হিসাবে দেখা হয়, যা অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোমের ৪০টি উদাহরণগুলির মধ্যে একটি। অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি, মানুষ বা বস্তুকে প্রকৃতপক্ষে বড়ো বা ছোটো দেখে বা বিকৃত দেখে। গবেষকদের মতে পিএমও-তে আক্রান্ত রোগীরা নিজেদের সমস্যা সম্পর্কে অন্যদের বলে না কারণ তারা ভাবে যে অন্যরা মনে করবে এটি একটি মানসিক ব্যাধির লক্ষণ। এটি এমন একটি সমস্যা যা লোকেরা প্রায়শই বুঝতে পারে না। এই গবেষণাপত্রের মাধ্যমে, গবেষকরা পিএমও কী তা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর আশা রাখেন।