‘ওবেসিটি’ শরীরের এমন এক বিশেষ অবস্থা যে অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হয় এবং ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটি হল ওবেসিটির এক প্রকার, যা সেন্ট্রাল ওবেসিটি বা ভিসারাল ওবেসিটি নামেও পরিচিত। অ্যাবডোমেনাল ওবেসিটি শরীরে চর্বি জমার এক গুরুতর রূপ হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি মানুষের বিভিন্ন বিপাকীয় ব্যাধি এবং অনান্য রোগের জন্য দায়ী৷ আর এই স্থূলতা শুরু হয় মধ্য বয়সে।
সেল মেটাবলিজম জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে মেলানোকরটিন-৪ রিসেপ্টর (MC4R) নামক একটি প্রোটিন অতিরিক্ত পুষ্টি শনাক্ত করে স্থূলতা প্রতিরোধে বিপাক ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। ইঁদুরের উপর করা গবেষণা অনুসারে, MC4R প্রোটিন কয়েকটি হাইপোথ্যালামিক নিউরন বা স্নায়ু কোশের প্রাইমারি সিলিয়ায় বা অ্যান্টেনার মতো কাঠামোয় কেন্দ্রীভূত থাকে। গবেষণায় জানা গেছে যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রাইমারি সিলিয়া আকারে ছোটো হয়ে যায়, ফলত MC4R প্রোটিন হ্রাস পায়। এর কারণে ইঁদুরের ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। নাগোয়া ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষক কাজুহিরো নাকামুরার মতে মানুষের মধ্যেও একই ধরনের প্রক্রিয়া বিদ্যমান। সুতরাং আশা করা যায় এই গবেষণা স্থূলতার চিকিত্সার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে এবং আমরা মোটা হয়ে যাই। স্থূল ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া বা রক্তে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধির প্রবণতা থাকে এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগে তারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। পূর্ববর্তী গবেষণা থেকে জানা গেছে মধ্যবয়সে মানুষের ওজন বৃদ্ধি হয় তার কারণ বয়সের সাথে সাথে সামগ্রিক বিপাক কমে যায়। কিন্তু গবেষকদের কাছে এই প্রক্রিয়াটি অস্পষ্ট ছিল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা MC4Rs-এর উপর তাদের গবেষণা পরিচালনা করেন। MC4R বিপাককে সক্রিয় করে এবং মেলানোকরটিন থেকে অত্যধিক খাওয়ার সংকেতের প্রতিক্রিয়া হিসাবে খাদ্য গ্রহণকে রোধ করে। প্রাথমিকভাবে, গবেষকরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে MC4R-এর অবস্থান পরীক্ষা করতে একটি অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে যা MC4R-কে দৃশ্যমান করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। তারা দেখেন MC4R হাইপোথ্যালামিক নিউরনের নির্দিষ্ট গ্রুপের প্রাইমারি সিলিয়াতে উপস্থিত রয়েছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে তারা প্রাইমারি সিলিয়ার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে দেখেন যে মধ্যবয়সী ইঁদুরের MC4R সিলিয়া ছোটো ইঁদুরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে খাটো। তদনুসারে, মধ্যবয়সী ইঁদুরের বিপাক এবং ক্যালোরি খরচ করার ক্ষমতা ছোটো ইঁদুরের তুলনায় অনেক কম ছিল। দলটি আরও দেখেন যে বেশি পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ইঁদুরের MC4R+ সিলিয়া দ্রুত গতিতে সংক্ষিপ্ত হয়। মজার বিষয় হল, গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে MC4R+ সিলিয়া যা বয়সের সাথে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল তা দুই মাস পরিমিত খাবার খাওয়ার ফলে আবার ইঁদুরের মধ্যে পুনরুত্থিত হয়েছিল। গবেষণায় ইঁদুরের মস্তিষ্কে কৃত্রিমভাবে লেপটিন নামক একটি হরমোন ঢোকানো হয়। মনে করা হয় লেপটিন খাদ্য গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের ক্ষুধা হ্রাস করা যায়নি, যা ইঙ্গিত করে যে লেপটিন স্থূলতা রোধ করতে পারে না।
স্থূল মানুষের মধ্যেও ‘লেপটিন প্রতিরোধ’ নামক এই ঘটনাটি প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়। এটি স্থূলতার চিকিত্সার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। গবেষণায় উপসংহারে বলা হয়েছে যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে MC4R+ সিলিয়ার সংক্ষিপ্তকরণ মধ্যবয়সী স্থূলতা এবং ইঁদুরের লেপটিন প্রতিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গবেষকদের মতে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা প্রতিরোধ ও চিকিত্সার ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রফেসর নাকামুরা বলেন পরিমিত খাদ্যাভ্যাস MC4R+ সিলিয়ার দৈর্ঘ্য বেশি সময় ধরে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে যাতে বয়সের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্কের স্থূলতা-বিরোধী সিস্টেম কার্যকর থাকে।