জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের নিউরোসায়েন্টিস্টরা অনেক অধ্যয়ন বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে মস্তিষ্কের একটি অংশ যা শারীরিকভাবে হাঁটা চলার সাথে যুক্ত, মস্তিষ্কের সেই অংশে অস্বাভাবিকতা থাকলে শিশুর মধ্যে ভাষা বিকাশেরও প্রতিবন্ধকতা ঘটে। এই আবিষ্কারের ফলে ভাষার সমস্যা নির্ণয় এবং তা নিয়ে চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি করার সম্ভাবনা রয়েছে। গবেষকরা ভাষা বিকাশের প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতা নিয়ে অনুসন্ধানে দেখেছেন, এর ফলে মনোযোগের অভাব/হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার(এডিএইচডি), ডিসলেক্সিয়া দেখা যায়। ডিসলেক্সিয়া হল একটি নির্দিষ্ট লার্নিং ডিজঅর্ডার যেখানে পড়ার প্রতিবন্ধকতা থাকে, সঠিক বা সাবলীল শব্দ শনাক্তকরণে, দুর্বল ডিকোডিং এবং দুর্বল বানানের সমস্যা থাকে। এই সমস্ত ধরনের অস্বাভাবিকত্ব মস্তিষ্কের গভীরে বেসাল গ্যাংলিয়ার মধ্যে অ্যান্টিরিয়র নিওস্ট্রিয়াটামে দেখা যায়। বেসাল গ্যাংলিয়া, সাবকর্টিক্যাল নিউক্লিয়াসের একটা গ্রুপ যা মূলত মোটর নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী অর্থাৎ পেশিচালনার জন্য দায়ী, সেইসাথে মোটর লার্নিং, কার্যনির্বাহী কার্যাবলী, আচরণ এবং আবেগের জন্য দায়ী।
ভাষার প্রতিবন্ধকতা কেন ঘটে তা বোঝার জন্য, গবেষকরা ব্যাধি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের গঠন পরীক্ষা করে ২২টা নিবন্ধের ফলাফল বিশ্লেষণ করেছেন। তারা মস্তিষ্কের গঠন পরীক্ষা করে দেখেছেন, একশো শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিরিয়র নিওস্ট্রিয়াটাম অস্বাভাবিক ছিল, আর মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশেও কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে। গবেষণার প্রধান লেখক জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের ব্রেন অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাবরেটরির স্নায়ুবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং পরিচালক মাইকেল টি. উলম্যান বলেছেন, এই গবেষণা ভাষার সমস্যার সাথে যুক্ত স্নায়ু চিহ্নিত করে একটা প্রধান, অচেনা ব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে৷ অ্যান্টিরিয়র নিওস্ট্রিয়াটাম থেকে কীভাবে ভাষার অসুবিধা হতে পারে তা বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন৷ উলম্যান বলেছেন ফলাফল থেকে ওষুধের সম্ভাব্য উপযোগিতা বোঝা যায়, বেসাল গ্যাংলিয়া কর্মহীনতার কারণে হাঁটাচলার দুর্বলতা উন্নত করার ক্ষেত্রে কার্যকর, যা ডোপামিন রিসেপ্টরগুলোতে কাজ করে। বেসাল গ্যাংলিয়ার অস্বাভাবিকতা নজর করতে পারলে তা সম্ভাব্য ভাষার বিকাশমূলক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনার প্রাথমিক বায়োমার্কার হিসাবে কাজ করবে। এই ধরনের প্রারম্ভিক সতর্কতার লক্ষণ থেকে রোগ নির্ণয় ও সম্ভাব্য প্রাথমিক চিকিত্সা শুরু করা যাবে। ডেভেলপমেন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ ডিসঅর্ডারের নিউরোবায়োলজি, বিশেষ করে বেসাল গ্যাংলিয়ার ভূমিকার ওপর গবেষণা এই সমস্যায় আক্রান্ত অনেক শিশুকে সাহায্য করতে পারে। এই গবেষণা নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ারে প্রকাশিত হয়েছে।