সাম্প্রতিক দশকগুলোয় প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের চলাফেরার প্রয়োজনীয়তা এবং ইচ্ছা দুটোই কমে গেছে। বিশ্বের জনসংখ্যার অনেকাংশ দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকে, হয় কম্পিউটারের সামনে অথবা বাড়িতে টিভির সামনে। অনেক মানুষের দিনের অধিকাংশ সময় কাটে অফিসে। ব্যস্ততা, কাজ আর বসে বসে মাথা খাটিয়েই কেটে যায়। ঘন্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসেই কাজ করেন অনেকে। আবার বাড়ির বয়স্ক লোকেদের সময় কাটে দীর্ঘক্ষণ টিভির সামনে বসে। সারাক্ষণ এই বসে থাকার কারণেই বাড়ছে নানা রোগের ঝুঁকি। মানুষের শরীরের বিভিন্ন কলকব্জা নিয়মিত নড়াচড়া করলে তবেই ঠিক থাকে। দীর্ঘসময় ধরে বসে থাকা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য স্পষ্টতই খারাপ। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান দিয়েগো (ইউসিএসডি) থেকে একটি নতুন গবেষণা এটি নিশ্চিত করেছে।
গবেষণায় ৬৩ থেকে ৯৯ বছর বয়সী মোট ৫,৮৫৬ জন মহিলা অংশগ্রহণকারী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। গবেষণার শুরুতে সাত দিনের জন্য তাদের কোমরে একটি অ্যাক্টিভিটি মনিটর পরতে বলা হয়েছিল। গবেষকরা তারপর এক দশক ধরে তাদের অনুসরণ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৭৩৩ জন গবেষণা চলাকালীন মারা যান। গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অ্যাক্টিভিটি মনিটরের তথ্য কাজে লাগিয়ে দেখেছেন, যে যারা দিনে সাড়ে নয় ঘন্টার কম বসে কাটিয়েছে তাদের তুলনায় যে অংশগ্রহণকারীরা দিনে ১১ ঘন্টার বেশি বসে কাটিয়েছেন তাদের অধ্যয়নের সময়কালে মৃত্যুর ঝুঁকি ৫৭% বেশি ছিল । আমাদের ধারণা নিয়মিত ব্যায়াম করলে অত্যধিক বসে থাকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি দূর হবে? কিন্তু এই গবেষণা অনুযায়ী বেশি মাত্রায় বা মাঝারি মাত্রায় জোরালো ব্যায়াম করলেও মৃত্যুর ঝুঁকি রয়ে যায়। ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে যারা বেশি সময়ের জন্য বসে থাকে তাদের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে ব্যায়াম করলেও টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার একটি সমীক্ষায় জানা গেছে যে প্রতিদিন ৯০০০ থেকে ১০৫০০ পদক্ষেপ হাঁটলে সময়ের আগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়, এবং এটি তাদের ক্ষেত্রেও সত্য যারা বেশি সময় ধরে বসে থাকে। ইউসিএসড এবং অস্ট্রেলিয়ান গবেষণায় দুটি পরস্পরবিরোধী ফলাফল দেখা যায় কারণ অস্ট্রেলিয়ার গবেষণায় কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করার জন্য মনিটর কব্জিতে পরা হয়েছিল। তাছাড়াও এক্ষেত্রে কার্যকলাপ মনিটরের ডেটাতে কোনও বিশেষ সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা হয়নি। যার ফলে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকলেও সেটা ভুলভাবে বসা হিসাবে গণ্য হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন অংশগ্রহণকারী আধা ঘন্টার জন্য স্থির থাকে, তাহলে সেটিকে আধা ঘন্টা বসা হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বসে থাকার সময়কে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বর্তমান নির্দেশিকা সুপারিশ করে যে প্রাপ্তবয়স্কদের বসার সময় সীমিত করা উচিত এবং দীর্ঘ সময় ধরে বসার ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে বিরতি নেওয়া উচিত। তাহলে কত সময় ধরে স্থির হয়ে বসে থাকা অনুচিত? ইউসিএসড সমীক্ষা বলছে প্রতিদিন ১১ ঘন্টা বসে থাকা যায় আবার অন্যান্য গবেষণা বলছে প্রতিদিন মাত্র ৭ ঘন্টা বসাও খুব বেশি হতে পারে। সুতরাং দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা এড়াতে মাঝে মাঝে ঊঠে হাঁটাচলা করতে হবে, ঘুরে বেড়াতে হবে। বাড়িতে, টিভি দেখার সময় বিজ্ঞাপন বিরতির সময় ঘুরতে হবে। কিন্তু যদি বয়সজনিত কারণে বা অন্যান্য কারণে দাঁড়াতে বা হাঁটতে অসুবিধে হয় তবে হাতের ছোটো ছোটো ব্যায়াম প্রতি ২০-৩০ মিনিট অন্তর অন্তর ২ মিনিট করে করলে রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস পেতে পারে। অর্থাৎ বেশি সময় ধরে স্থির হয়ে বসে থাকা চলবে না।