টেক্সাসের বাসিন্দা পল আলেকজান্ডার ডালাসের ছ বছর বয়সে পোলিও হয়, যাতে তার ঘাড়ের নীচ থেকে বাকি অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ে। শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য তাকে এক ধরনের যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়, দিনের বেশিরভাগ সময়ে তাকে সাবমেরিনের মতো দেখতে এক সিলিন্ডারে আটকে থেকে শ্বাস গ্রহণ করতে হত। কিন্তু তবুও প্রকৃতি এই অদম্য মানুষটিকে হারাতে পারেনি। তিনি যেভাবে তার শারীরিক অসুবিধা জয় করে জীবন যাপন করেছেন তা বহু মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। আলেকজান্ডার লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন। তিনি আইন নিয়ে পড়া শেষ করে, কোর্টে ওকালতি করেন, তার লেখা একটি বইও আছে। ওকালতি করার সময় তিনি বিশেষ এক হুইল চেয়ারে আদালতে যেতেন যা তার শরীর সোজা রাখতে সাহায্য করত। সম্প্রতি ৭৮ বছর বয়সে এই ব্যক্তি মারা গেছেন।
আলেকজান্ডার যান্ত্রিক ফুসফুসে সবচেয়ে বেশি সময় কাটানোর জন্য অফিসিয়াল গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে স্থান পেয়েছেন। ৩০-এর দশকে উদ্ভাবিত লোহার ফুসফুস এক ধরনের ভেন্টিলেটর, যা ব্যক্তির শরীরের বেশিরভাগ অংশকে ঘিরে রাখে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য বদ্ধ স্থানে বায়ুচাপ পরিবর্তিত করে। যান্ত্রিক লোহার ফুসফুসে সিল করা প্রকোষ্ঠে পাম্প লাগানো থাকে। এই প্রকোষ্ঠে চাপ বাড়িয়ে কমিয়ে রোগীর ফুসফুসকে সংকুচিত প্রসারিত করা যায়। জোনাস সালকের পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পরে এই যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ১৯৫৫ সালে পেশি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেলে এই যন্ত্র পক্ষাঘাতজনিত অসুস্থতাতে সহায়তা দিতে বহুল ব্যবহৃত হত। গিনেস পেজ অনুসারে, ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্যে “ব্যাঙের মতো শ্বাস” নিতে শেখার পরে আলেকজান্ডার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই যন্ত্র ছেড়ে শ্বাস নিতে সক্ষম হতেন। গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল শ্বাস-প্রশ্বাস “ব্যাঙের শ্বাস” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাধারণত যারা যান্ত্রিক শ্বাসযন্ত্রের সহায়তার উপর নির্ভর করেন, তাদের স্বাধীনভাবে শ্বাস নেওয়ার জন্য এই সক্রিয় ফিজিওথেরাপি কৌশল শেখানো হয়। এতে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ করানোর জন্য জিহ্বাকে শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রধান অঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করতে হয়, মুখভর্তি বাতাস নিয়ে গলার পেশিগুলো ব্যবহার করে বাতাসকে ফুসফুসে প্রবেশ করানো হয়। এই শ্বাসপ্রশ্বাস পদ্ধতি শেখার পর ধীরে ধীরে আলেকজান্ডার শুধুমাত্র রাতে লোহার ফুসফুসে ঢুকে শ্বাস নিতেন।