পৃথিবী, চাঁদ এবং সূর্য যখন এক সরল রেখায় চলে আসে, যখন পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চাঁদ অবস্থান করে, তখন সূর্যগ্রহণ হয়। চাঁদের অবস্থান অনুযায়ী গ্রহণের ধরন নির্ভর করে। চাঁদের আকার সূর্যের চেয়ে অনেক ছোটো হলেও চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি রয়েছে। তাই চাঁদের প্রচ্ছায়া পৃথিবীর যে অঞ্চলে পড়ে সেখান থেকে সূর্যকে সম্পূর্ণরূপে দেখা যায় না। সেই অঞ্চলে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হয়। পূর্ণগ্রাস গ্রহণ বিরল নয়। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, টেক্সাস থেকে মেইন পর্যন্ত ১১৫ মাইল বিস্তৃত এলাকা জুড়ে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এই অঞ্চলের বাইরে, সংলগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্য থেকে সূর্য আংশিকভাবে অস্পষ্ট থাকবে। সেই আংশিক সূর্যগ্রহণ-এবং পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের আগে এবং পরে যে আংশিক গ্রহণের পর্যায়গুলো ঘটবে তা নিরাপদে দেখতে কিছু বিশেষ ধরনের চশমা লাগবে। এগুলো অতিরিক্ত-গাঢ় কালো রঙের চশমা যা প্রায় সমস্ত আলো রুদ্ধ করে, আর রেটিনাকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। গবেষকদের মতে এই সুরক্ষাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ সুরক্ষা ছাড়া সরাসরি সূর্যের দিকে তাকালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চোখের স্থায়ীরূপে ক্ষতি হতে পারে- সোলার রেটিনোপ্যাথি, বা তীব্র আলোর ঝলকানিতে রেটিনা পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
চোখের বলের পিছনে আলো-সংবেদনশীল স্তর হল রেটিনা ।যখন রেটিনা আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা উদ্দীপিত হয়, তখন রড এবং কোণ নামের আলো-শনাক্তকারী কোশ রাসায়নিক সংকেত পাঠায়। এর ফলে বৈদ্যুতিক সংকেত অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে যায়। শুধু কয়েক সেকেন্ডের জন্য সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে এই কোশ থেকে অতিরিকত রাসায়নিক ক্ষরণ হয় যার ফলে ফ্রি র্যাডিকেল এবং প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন তৈরি হতে থাকে যা কোশের ক্ষতি করে। এই ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে আবার স্থায়ীও হতে পারে। গবেষকদের মতে সূর্যের দিকে তাকানোর কয়েক ঘন্টা পরে বোঝা যায় যে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হওয়া ব্যক্তির দৃষ্টির কেন্দ্রে একটি অস্পষ্ট বা ব্লাইন্ড স্পট হতে পারে এবং রঙ চেনার ক্ষমতা বিকৃত বা পরিবর্তিত হতে পারে। ইক্লিপস গ্লাস বা সূর্যগ্রহণ দেখার চশমা সূর্যের আলোর তীব্রতা কমাতে সৌর ফিল্টার ব্যবহার করে কাজ করে। এগুলো সাধারণ সানগ্লাসের চেয়ে কমপক্ষে ১০০০ গুণ বেশি গাঢ়। একটি সঠিক সৌর ফিল্টার, সূর্যের দৃশ্যমান আলোর ০.০০০৩২ শতাংশই আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। সৌর ফিল্টার ইনফ্রারেড এবং অতিবেগুনী রশ্মিকেও রোধ করে। ২০২৩-এর AAS রিপোর্ট অনুযায়ী, নিরাপদভাবে সূর্যগ্রহণ দেখার চশমায় একটি অ্যালুমিনিয়ামের প্রলেপযুক্ত পলিয়েস্টার বা রেজিনে কার্বন কণা দিয়ে তৈরি একটি কালো পলিমার ব্যবহার করা হয়। এই চশমাগুলো দূরবীন, ক্যামেরা বা টেলিস্কোপের সাথে ব্যবহার করা উচিত নয় বরং বাইনোকুলার, ক্যামেরা এবং টেলিস্কোপের জন্য ডিজাইন করা অন্যধরনের বিশেষ সৌর ফিল্টার ব্যবহার করা উচিত।