শরীরে বাড়তি মেদ জমার পিছনে যে কার্বোহাইড্রেটের হাত রয়েছে তা আমাদের মাথায় গেঁথে গেছে। বেশি পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া ও কার্বোহাইড্রেটে জাতীয় খাবার কম খাওয়া দীর্ঘকাল ধরে জিমে যাওয়া এবং বডি বিল্ডারদের জন্য এক অতিপরিচিত পদ্ধতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে যার লক্ষ্য পেশি অর্জন করা এবং মেদ হ্রাস করা। কিন্তু নিখুঁত শরীর গড়ার এটি একমাত্র পদ্ধতি নয়। আরও নির্দিষ্টরূপে বলতে গেলে, পেশি বৃদ্ধি হল দুটি প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি ভারসাম্য: পেশি প্রোটিন সংশ্লেষণ- যেখানে নতুন পেশি কলা তৈরি বা মেরামত করা হয় এবং দ্বিতীয়টি হল পেশি প্রোটিন ক্ষয় যেখানে পেশির কলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যেহেতু এই দুটি প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত ঘটছে, তাই এই প্রক্রিয়ার হার এবং ভারসাম্য বজায় থাকলে সামগ্রিকভাবে শরীর প্রভাবিত হয়। দেহ সৌষ্ঠব গঠনের জন্য উপযুক্ত পুষ্টির পাশাপাশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। প্রোটিন অপরিহার্য কারণ এতে অ্যামিনো অ্যাসিড যেমন লিউসিন থাকে যা পেশি তৈরিতে বিল্ডিং ব্লক হিসেবে কাজ করে। দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত ক্যালোরি খাওয়ার পাশাপাশি দৈনিক প্রোটিন গ্রহণ সামগ্রিক পেশির বিকাশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। অন্যান্য পুষ্টি, যেমন ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজ, পেশি নির্মাণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন। অন্যদিকে, শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালোরি গ্রহণ করা আপনার প্রশিক্ষণকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু গবেষণা অনুসারে শরীর চর্চার পরে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন একসাথে খেলে পেশি প্রোটিন সংশ্লেষণকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, আবার অন্যান্য গবেষণা থেকে জানা যায় যে শুধুমাত্র প্রোটিন গ্রহণ করলেই পেশি বৃদ্ধি পায় কারণ অ্যামিনো অ্যাসিড এই প্রক্রিয়ার চাবিকাঠি, এবং কার্বোহাইড্রেটের এই ক্ষমতা নেই ফলত পেশি প্রোটিন সংশ্লেষণ চালাতে পারে না।
কিন্তু কার্বোহাইড্রেট পেশি প্রোটিন ক্ষয়ের মাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে কারণ কার্বোহাইড্রেট, হরমোন ইনসুলিন তৈরি করতে শরীরকে ট্রিগার করে, আর ইনসুলিন প্রোটিনের ক্ষয় কম করে। আবার প্রোটিন ইনসুলিন উত্পাদনকেও প্রভাবিত করে, অনুরূপ প্রভাব তৈরি করে। অনেক বডি বিল্ডার তাদের দেহসৌষ্ঠব গঠনের জন্য একটি ‘বাল্কিং’ পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায় যখন তাদের প্রবণতা থাকে পেশির ভর বাড়ানো তাই তারা প্রতিদিন প্রায় ১৫% বা তার বেশি ক্যালোরি খায়। এরপর শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে একটি ‘কাটিং’ পর্যায় তারা অনুসরণ করে। এর কারণে তারা কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করে। কিন্তু কম কার্ব ডায়েটের অর্থ হল কম শক্তি, যা দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা, ক্লান্তি এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস করে। কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজের মাধ্যমে আমাদের শক্তি সরবরাহ করে, যা পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য গ্লাইকোজেন হিসাবে পেশিতে সঞ্চিত থাকে। শরীর চর্চার সময় আমরদের শক্তি খরচ করতে হয় তাই আমরা গ্লাইকোজেন ব্যবহার করি। আমরা যদি কার্বোহাইড্রেটের মাধ্যমে গ্লাইকোজেন জমা না করি তবে পেশি তৈরির প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে না। পুষ্টিবিদরা সব সময়ে বলেন যে, কার্বোহাইড্রেট হল পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস। কার্বোহাইড্রেট যাঁরা এড়িয়ে চলেন, তাঁরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তাই উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেটের বদলে খাওয়া যেতে পারে কম মাত্রার কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার। এতে পেশি গঠনের পাশাপাশি শরীরও সুস্থ থাকবে।