স্বল্প দাম, সহজলভ্য এবং টেকসই হওয়ার কারণেই প্লাস্টিকের চাহিদা বিপুল । আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বহুলাংশে বদলে দিয়েছে প্লাস্টিক। সকালে দাঁত মাজার ব্রাশ থেকে শুরু করে সারা দিনে আমরা যা কিছু ব্যবহার করি, তার অধিকাংশই প্লাস্টিক। প্লাস্টিক যেমন জলনিরোধক, হালকা তেমনই এটি নানা রূপ ও আকারে পাওয়া যায়। এই উপাদানটি ছাড়া আমাদের জীবন অচল। কিন্তু প্লাস্টিকের বড়ো দোষ হল, এটি ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ বা জৈব প্রক্রিয়ায় পচনশীল নয়। তাই ন্যানো- এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা আমাদের পরিবেশে সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে – জল, মাটি এবং বায়ু। বিভিন্ন সৃজনশীল কৌশল ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই প্লাস্টিকের কণা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। খুঁজেও পেয়েছেন পানীয় জল পরিষ্কার করার উপায় যা এক কাপ চা বা কফি তৈরির মতোই সহজ। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লেটারে বিজ্ঞানীরা বলেছেন ক্যালসিয়ামযুক্ত ট্যাপের বা কলের জল ফুটিয়ে ও ফিল্টার করে বা ছেঁকে খেলে প্রায় ৯০% ন্যানো- এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক অপসারণ করা যেতে পারে।
ক্রমশ ন্যানো- এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক (NMPs) দূষণ খুব সাধারণ হয়ে উঠছে বিশেষ করে জল সরবরাহের মাধ্যমে। এই প্লাস্টিক কণাগুলো এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগের এক ভাগের মতো ছোটো হতে পারে বা ৫ মিলিমিটারের মতো বড়োও হতে পারে। যদিও মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এই কণাগুলোর প্রভাব নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে, তবে বর্তমান গবেষণা থেকে জানা যায় যে এই প্লাস্টিক কণা গ্রহণ করলে আমাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম প্রভাবিত হতে পারে। গবেষক ঝানজুন লি, এডি জেং এবং সহকর্মীরা দেখতে চেয়েছিলেন যে জল ফোটানো কতটা কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে প্রতিপন্ন হতে পারে। গবেষকরা কলে খর জলের নমুনা সংগ্রহ করে তা পাঁচ মিনিটের জন্য ফোটান এবং পরে ঠান্ডা করেন। ফুটন্ত খর জল যাতে খনিজ পদার্থ রয়েছে তা ফোটানোর ফলে লাইমস্কেল বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) নামে সাদা চক বা খড়ির মতো পদার্থ তৈরি করে। ফলত বলা যেতে পারে যে জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে CaCO3 ইনক্রসট্যান্ট বা স্বচ্ছ একটা কাঠামো গঠন করে, যা প্লাস্টিকের কণাগুলো আবৃত করে রাখে এবং তা সহজেই সরিয়ে ফেলা যায়। জলে ভাসমান অবশিষ্ট প্লাস্টিক কণা ছেঁকে বা ফিল্টার করে সরিয়ে ফেলা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি খর জলের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী কারণ প্রতি লিটার জলে যদি ৩০০ মিলিগ্রাম CaCO3 থাকে তবে ন্যানো- এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার প্রায় ৯০% সরিয়ে ফেলা যেতে পারে। এমনকি মৃদু জলের নমুনায় যেখানে প্রতি লিটার জলে ৬০ মিলিগ্রামের কম CaCO3 থাকে সেক্ষেত্রে জল ফোটানোর মাধ্যমে ২৫% NMPs সরিয়ে ফেলা যেতে পারে। গবেষকদের মতে এই পদ্ধতি ন্যানো- এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক সেবনকে অনেক পরিমাণে হ্রাস করতে পারে।