উচ্চ শব্দে উন্মুক্ত হলে শ্রবণশক্তি হ্রাস লক্ষাধিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, কারণ শ্রবণশক্তি হ্রাসের জীববিজ্ঞান সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় না, ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস রোধ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। যুদ্ধক্ষেত্রে যারা যান তাদের উচ্চ শব্দ থেকে কানের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। যারা নির্মাণকার্যের স্থলে কাজ করেন তাদেরও কানের সমস্যা হতে পারে। এমনকি খুব জোরে কনসার্ট শুনলেও কানের ক্ষতি হতে পারে। প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে, পিটসবার্গ হিয়ারিং রিসার্চ সেন্টার তীব্র শক্তিশালী শব্দ থেকে শ্রবণশক্তি হ্রাসের একটি আণবিক প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে ওষুধ দিয়ে এই হ্রাস প্রশমিত করা যেতে পারে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে লক্ষ লক্ষ আমেরিকান ব্যক্তি উচ্চ শব্দ থেকে শ্রবণশক্তি হ্রাসের শিকার হয়ে থাকেন। তাদের অভ্যন্তরীণ কানের কোশীয় স্তরে ক্ষতি হয়। অতিরিক্ত জিঙ্ক অন্তকর্ণে ভেসে বেড়ায়, এই খনিজ পদার্থ সঠিক কোশীয় কার্যক্ষমতা ও শ্রবণশক্তির জন্য অপরিহার্য। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে যে আণবিক স্পঞ্জ হিসাবে কাজ করে এমন ওষুধ অতিরিক্ত জিঙ্ক শুষে নিয়ে হারানো শ্রবণশক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করতে পারে। অথবা, যদি প্রত্যাশিত উচ্চ শব্দে উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে ওষুধ আগে ব্যবহার করলে শ্রবণশক্তি হ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। গবেষণায় আমেরিকার কথা বলা হলেও বধিরতাসম্পন্ন মানুষ দেশ কাল ভেদে বিশ্বের সর্বত্র রয়েছেন।
ইঁদুরের অভ্যন্তরীণ কানের বিচ্ছিন্ন কোশের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, গবেষকরা দেখেছেন ইঁদুররা উচ্চ শব্দের সংস্পর্শে আসার কয়েক ঘন্টা পরে, তাদের অভ্যন্তরীণ কানের জিঙ্কের মাত্রা বেড়ে যায়। উচ্চ শব্দের এক্সপোজার অতিরিক্ত এবং অন্তঃকোশীয় স্থানে প্রচুর জিঙ্ক মুক্ত করে, যা কোশীয় ক্ষতির দিকে নিয়ে যায় এবং কোশ থেকে কোশে যোগাযোগ ব্যাহত করে। এই আবিষ্কার এক সম্ভাব্য সমাধানেরও খোঁজ দেয়। গবেষকরা পরীক্ষায় দেখিয়েছেন, যে ইঁদুরদের ধীর-নিঃসরণকারী যৌগ দিয়ে চিকিৎসা করলে অতিরিক্ত মুক্ত জিঙ্ক ঐ যৌগ আটকে দেয়, ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কম হয় এবং শব্দ থেকে কানের ক্ষতি কম হয়। গবেষকরা বর্তমানে শ্রবণশক্তি হ্রাস থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য প্রাক-ক্লিনিক্যাল নিরাপত্তায় এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে পরীক্ষা করছেন।