কিছু ভাইরাস কোটি বছর আগে আদিম জীবকে সংক্রামিত করেছিল। সেই ভাইরাল জেনেটিক উপাদান প্রথমে বহু-কোশীয় প্রাণীর জিনোমে একত্রিত হয় এবং আজও সেই জেনেটিক উপাদান আমাদের ডিএনএতে রয়ে গেছে। স্প্যানিশ ন্যাশনাল ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার (CNIO)-এর গবেষকরা সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে বর্ণনা করেছেন যে এই ভাইরাসগুলি আমাদের বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক, এদের ভূমিকা নিষিক্তকরণের কয়েক ঘন্টা পরে শুরু হয়, যখন স্ত্রী জার্ম সেল দুই থেকে চারটি কোশে বিভক্ত হয়ে টোটপোটেন্সি থেকে প্লুরিপোটেন্সিতে রূপান্তরিত হয়। এই ধাপের আগে, ভ্রূণের দুটি কোশের প্রতিটিই টোটিপোটেন্ট, অর্থাৎ এর থেকে স্বাধীন জীব বিকশিত হতে পারে। এর পরবর্তী পর্যায়ের চারটি কোশ প্লুরিপোটেন্ট, কারণ তারা শরীরের যে কোনো বিশেষ কলা তৈরি করতে পারে।
৫০০ মিলিয়ন বছর আগে ক্যামব্রিয়ান যুগে এন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাস থেকে জেনেটিক উপাদান জীবের জিনোমে একত্রিত হয়েছিল। এই ক্যামব্রিয়ান যুগে হঠাৎ জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়েছিল। এর আগে অনেক সরল, এককোশী বা বহুকোষী প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল, তার থেকে এই আচমকা জীববৈচিত্র্যের পেছনে কারণ হিসেবে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে। গত এক দশক ধরে, এই ভাইরাসগুলির জেনেটিক সিকোয়েন্স থেকে দেখা গেছে, এরা মানুষের জিনোমের অন্তত ৮-১০% তৈরি করেছে। কিছুকাল আগেও এই ভাইরাল অবশিষ্টাংশগুলো ‘জাঙ্ক ডিএনএ’ হিসাবে বিবেচনা করা হত, অর্থাৎ এমন জেনেটিক উপাদান যা ব্যবহারযোগ্য নয় বরং ক্ষতিকারক হতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন সম্প্রতি বোঝা গেছে এই রেট্রোভাইরাসগুলি, আমাদের সাথে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সহ-বিকশিত হয়েছে, এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ রয়েছে, যেমন অন্যান্য জিনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। এই গবেষণা দেখায় যে MERVL (মিউরিন এন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাল – এল) রেট্রোভাইরাস ভ্রূণের বিকাশের গতি নির্ধারণ করে, বিশেষ করে টোটিপোটেন্সি থেকে প্লুরিপোটেন্সিতে রূপান্তরের নির্দিষ্ট ধাপে, এবং এর ঘটার প্রক্রিয়াটিও ব্যাখ্যা করে। গবেষকরা জানিয়েছেন তাদের এই আবিষ্কার পুনরুত্পাদনকারী ওষুধের ক্ষেত্রে এবং কৃত্রিম ভ্রূণ তৈরির ক্ষেত্রে সাহায্য করবে, টোটিপোটেন্সি পর্যায়ে স্থিতিশীল কোশ লাইন তৈরি করার ক্ষেত্রে একটি নতুন উপায় দেখা দিতে পারে।