রাতে দীর্ঘ ভালো ঘুমের পরও দিনে ঘুম পায়? তাহলে এই লেখাটি পড়ুন। যে ব্যক্তিদের ভালো রাতের ঘুমের পরেও দিনের বেলা অত্যধিক ঘুম পায়, তারা ইডিওপ্যাথিক হাইপারসোমনিয়া নামে পরিচিত একটি অবস্থাতে ভুগতে পারেন। সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে এই স্নায়বিক ব্যাধিটি আগে যা মনে করা হত তার চেয়ে বেশি দেখা যায়। আমেরিকান একাডেমি অফ নিউরোলজির অফিসিয়াল জার্নাল নিউরোলজির অনলাইন সংস্করণে এই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ইডিওপ্যাথিক হাইপারসোমনিয়ার লক্ষণের মধ্যে শুধু দিনের বেলা খুব বেশি ঘুমানো নয়, অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমানো, ঘুম থেকে উঠতে অসুবিধা হওয়া এবং ঘুম থেকে উঠে দিশেহারা হয়ে যাওয়াও পড়ে। এতে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পূর্ণ হওয়া বেশ কঠিন হয়ে ওঠে, আর তাতে একজন ব্যক্তির জীবনযাত্রার মান হ্রাস পায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, ইডিওপ্যাথিক হাইপারসোমনিয়ার প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করা কঠিন কারণ রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ঘুমের পরীক্ষা প্রয়োজন। তারা বড়ো সংখ্যক মানুষের ঘুমের অধ্যয়ন থেকে ডেটা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এই অবস্থা পূর্ববর্তী অনুমানের থেকে বেশি লোকের হয়। মৃগীরোগ, বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং সিজোফ্রেনিয়ার মতো কিছু সাধারণ স্নায়বিক এবং মানসিক রোগের মতো এটাও বেশ সাধারণ রোগ।
গবেষকরা ৫৯ বছর বয়সী ৭৯২ জনের জন্য ঘুমের তথ্য নিয়েছেন। সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের রাতের ঘুম অধ্যয়ন এবং দিনের তন্দ্রা অধ্যয়ন করা হয়েছে। কেউ চারবার বা পাঁচবার ঘুমের ক্ষেত্রে কত দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে, তাও দেখা হয়েছে। এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের দিনের বেলা ঘুম পাওয়া, ক্লান্তি, দিনে ঘুমনোর সময় এবং কর্মব্যস্ত দিনের রাতে এবং কর্মহীন দিনে রাতে তারা কত ঘন্টা ঘুমোয় সে সম্পর্কেও জরিপ করা হয়েছিল। গবেষকরা নির্ধারণ করেছেন যে ১২ জনের ইডিওপ্যাথিক হাইপারসোমনিয়ার সম্ভাব্য কেস ছিল, দীর্ঘ সময় ঘুমের পরও এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তীব্র ঘুম পাচ্ছিল। শূন্য থেকে ২৪ স্কোর রেঞ্জের তন্দ্রা নিয়ে সমীক্ষায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, একজন ব্যক্তির গাড়িতে বসে থাকার সময়, কথা বলার সময় এবং থামার সময় তন্দ্রা আসার কতটা সম্ভাবনা থাকে, ইডিওপ্যাথিক হাইপারসোমনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের গড় স্কোর ছিল ১৪ আর যাদের এই রোগ নেই, তাদের স্কোর ছিল ৯। ১০-এর বেশি স্কোর উদ্বেগের বিষয়। ঘুমের অধ্যয়ন চলাকালীন দেখা গেছে, ইডিওপ্যাথিক হাইপারসোমনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা রাতে ঘুমোতে গড়ে চার মিনিট এবং দিনে ঘুমোতে ছয় মিনিট সময় নেন, যেখানে ব্যাধিবিহীন লোকদের রাতে ঘুমোতে ১৩ মিনিট এবং দিনের তন্দ্রা আসতে ১২ মিনিট সময় লাগে। অধ্যয়নে দিনের বেলা ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস ১২ জনের মধ্যে ৪ জনের চলে গেছে, অর্থাৎ এই রোগ সারানো সম্ভব, কিন্তু কীভাবে তা সারে, এর রোগের পেছনে কী কারণ তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।