হালকা অথচ মোটামুটি শক্ত বলে প্লাস্টিকের ব্যবহার ১৯৬০-এর দশকের গোড়ায় শুরু হয়েছিল। আজ আমরা সব কিছুতেই প্লাস্টিক ব্যবহার করি। পৃথিবীতে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্য আজ পাহাড় পরিমাণে জমা হয়েছে। বর্জ্য প্লাস্টিক যদি জলে-মাটিতে-বাতাসে মিশে যেত তবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ থাকত না। কিন্তু প্লাস্টিক তো আর বায়োডিগ্রেডেবল নয়, প্লাস্টিক প্লাস্টিকই থাকে। কেবল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় ভেঙে তার নতুন নামকরণ হয় ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রাণীদেহের জন্য ক্ষতিকারক। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ জন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে এক জনের প্রসব, সময়ের আগেই হয়ে যাচ্ছে আর এই অকাল প্রসবের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে মহিলারা সাধারণ প্লাস্টিক দ্রব্যের কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসছে। থ্যালেট নামক রাসায়নিক প্লাস্টিককে নরম করতে ব্যবহৃত হয়। প্লাস্টিকের পাত্রে, জিনিসপত্র মোড়ানোর ক্ষেত্রে, প্রসাধন সামগ্রীতে, খেলনা তৈরিতে- এই রকম হাজার হাজার ক্ষেত্রে এই প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়। কয়েক দশক ধরে থ্যালেটকে চিকিৎসকরা “হরমোন ডিসরাপ্টার” বলে আখ্যা দিয়েছেন যা এন্ডোক্রিন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে এবং স্থূলতা, হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং প্রজনন ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। যেহেতু থ্যালেট হরমোনের ক্ষরণকে প্রভাবিত করে, তাই এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে মহিলারা শিশুদের সময়ের আগেই প্রসব করে। এমন কথাই জানিয়েছে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাঙ্গোন হেলথ সেন্টারের গবেষক লিওনার্দো ট্রাসান্ডে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০০-এরও বেশি গর্ভবতী মহিলার প্রস্রাবে থ্যালেটের মাত্রা বিশ্লেষণ করে, গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেন রাসায়নিকের সংস্পর্শ কীভাবে শিশুর জন্মকে ত্বরান্বিত করে। দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ-এর সমীক্ষা অনুসারে, ১০% গর্ভবতী মহিলা যাদের বেশি মাত্রায় থ্যালেট রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ৩৭ সপ্তাহের আগে সন্তান জন্ম দেওয়ার ঝুঁকি ৫০% বৃদ্ধি পায়। বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেন যে ২০১৮ সালে প্রায় ৫৬০০০ শিশুর সময়ের পূর্বে জন্ম থ্যালেট এক্সপোজারের কারণে হতে পারে। গবেষকদের অনুমান যে তিন চতুর্থাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে থ্যালেট আমাদের শরীরের সংস্পর্শে আসে প্লাস্টিকের মাধ্যমে। সুতরাং সমাজের জন্য প্লাস্টিকের উপকারিতা ও ক্ষতির তুল্যমূল্য বিচার দরকার। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন স্বাস্থ্য গবেষক, স্টেফানি ইক বলেন যে গবেষণাটি যদিও নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি যে সময়ের পূর্বে শিশুর জন্মের জন্য সরাসরি থ্যালেটই একমাত্র কারণ। তবে বহু পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা এই অনুমানকে সমর্থন করে। তাই এই রাসায়নিক এড়াতে, প্লাস্টিকে মোড়ানো খাবার কম খাওয়া উচিত এবং থ্যালেট রয়েছে এমন প্রসাধন সামগ্রী এড়িয়ে যাওয়া উচিত। গবেষকরা আরও সতর্ক করেন যে মাইক্রোওয়েভ বা ডিশ ওয়াশারে প্লাস্টিকের বাসন রাখলে থ্যালেট নির্গত হতে পারে, এবং পরে তা খাবারে মিশে যেতে পারে।