রাস্তায় হাঁটার সময়, আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, কোথায় ঘুরতে হবে, কতটা যেতে হবে তা আমাদের মাথার মধ্যে চলতে থাকে, আশেপাশের নানা নিশানা থেকে যেমন আমরা বুঝতে পারি, আমাদের মাথাও কিন্তু গন্তব্য অভিমুখ সম্পর্কে আমাদের জানান দিতে থাকে। ঠিকমতো গন্ত ব্যস্থলে যাওয়া মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণীরক্ষেত্রেও জরুরি। নেচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে একটা ফলের মাছি যে দিকে যাচ্ছে তার থেকে সে যে অভিমুখে যাবে নিউরন কীভাবে তা নির্দেশ করে। ২০১৫ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল, একটা মাছি কোন দিকে অভিমুখী তা সংকেত দেওয়ার জন্য দায়ী কোশ হল “কম্পাস” নিউরন। পরবর্তী ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, মাছির অভিমুখের নিউরন ত্রুটিপূর্ণ হলে মাছি একটা সরল রেখায় নেভিগেট করতে অক্ষম হয়।
পিটার মাসেলস পারেস, মাছির লক্ষ্য বরাবর কোণের ট্র্যাক করার জন্য দায়ী কোশগুলো আবিষ্কার করেন। পারেস এবং সহকর্মীরা মাছিদের নড়াচড়ার সময় নিউরন কীভাবে নির্দেশ দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ভার্চুয়াল পরিবেশে টু-ফোটোন মাইক্রোস্কোপি ব্যবহার করেছিলেন। গবেষকরা যখনই ভার্চুয়াল পরিবেশ ঘুরিয়ে দেন, তারা তখনই দেখতে পান মস্তিষ্কে মাছির কম্পাস নিউরনের কার্যকলাপ ঘুরে যাচ্ছে।
কিন্তু দেখা গেছে কিছু কোশ, FC2 নিউরন হিসাবে পরিচিত, যা মূল অভিমুখ থেকে সরেনা, এই নিউরন সেদিকে নিজেদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে। যেমন কিছুটা অপরিচিত জায়গায় পূর্বদিকে বাজারের দিকে যাওয়া শুরু করলেন, কেউ টেনে অন্য দিকে নিয়ে যেতে লাগলো, আপনার মাথার মধ্যে কিন্তু পূর্বদিক কোনটা তা ঘুরতে থাকবে। এই কাজটাই মাছিতে FC2 নিউরন করে থাকে। লক্ষ্য ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে FC2 নিউরনের ভূমিকা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে, দলটি অপটোজেনেটিক্স ব্যবহার করেছিল, এই কৌশলে নিউরনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে আলো ব্যবহার করা হয়। FC2 কোশের ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করে, গবেষকরা মাছির নেভিগেশন পরিবর্তন করতে সক্ষম হন। এই দুধরনের নিউরন চিহ্নিত করার সাথে সাথে, গবেষকরা দুধরনের সংকেত একত্রিত করার জন্য দায়ী মস্তিষ্কের সার্কিট দেখেছেন। ফ্লাই ব্রেন কানেক্টোম, বিভিন্ন নিউরনের মধ্যে সংযোগের বিশদ একটি মানচিত্র। এই সংযোগ থেকে দেখা গেছে, PFL3 কোশের সেট কম্পাস নিউরন এবং লক্ষ্য নিউরন উভয় থেকে ইনপুট গ্রহণ করে। পরীক্ষার দেখা গেছে এই PFL3 নিউরন মস্তিষ্কের মোটর সিস্টেমকে প্রভাবিত করে মাছিকে বলে দেয় যে কোন পথে ঘুরতে হবে। মাছির মস্তিষ্ক অধ্যয়ন করে, স্থানিক ধারণার প্রাথমিক আভাস গবেষকরা পেয়েছেন, তাদের আশা এই ফলাফল থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের গন্তব্য অভিমুখের জটিল প্রক্রিয়া বোঝা সম্ভব হবে।