পৃথিবীর জলের সিংহভাগ অংশ, প্রায় ৯৭ শতাংশ, লবণাক্ত মহাসাগরে পাওয়া যায়, যা পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। ৩ শতাংশ তাজা জল বেশিরভাগই বরফে, হিমবাহে আবদ্ধ, যার মধ্যে বেশ কিছু দ্রুত গলে মিশে যাচ্ছে মহাসাগরে। পুকুর, হ্রদ এবং নদীতে কিছুটা পানীয় জল পাওয়া গেলেও দূষণ, অতিরিক্ত ব্যবহারে তা পানীয় অযোগ্য। সবচেয়ে বড় মিষ্টি জলের উৎস, ভূগর্ভস্থ জলাশয়ে রয়েছে, যা পৃথিবীর মোট জলের মাত্র ০.৮ শতাংশ। কয়েক দশকের খরা, দূষণ এবং অত্যধিক ব্যবহার, জলের সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে, তার সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান লোনা জলের অনুপ্রবেশ আরও বেশি ক্ষতির হুমকি দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শত শত কূপের ভূগর্ভস্থ জলের স্তরের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২১ শতকের তুলনায় তা ৭১ শতাংশ কমে গেছে।
জরিপ থেকে জানা গেছে, ভূগর্ভস্থ জলের হ্রাস সর্বজনীন নয়। শুষ্ক অঞ্চল এবং বেশি চাষ হয়, এমন স্থানে জলস্তর সবচেয়ে কম থাকে। তবে এর মধ্যে কিছু জায়গায় জলাশয়গুলো পুনরায় পূরণ হতে শুরু করেছে। গবেষণা জানাচ্ছে, শুষ্ক দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের আব্বাস-ই শার্গি অববাহিকা এই শতাব্দীর শুরুর আগেই বছরে প্রায় এক ফুট হারে ভূগর্ভস্থ জল হারাচ্ছিল। কারখেহ বাঁধ থেকে জলের গতিপথ পাল্টানোর জন্য গত দুই দশকে বছরে প্রায় ৩ ফুট হারে ভূগর্ভস্থ জল বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যারিজোনার টাকসনের কাছে উচ্চ সান্তা ক্রুজ অববাহিকাটি আব্বাস-ই শার্গির মতো দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছিল, এরপর জলবিভাগের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জলাধারগুলিতে জলস্তর বৃদ্ধির জন্য একটি অভিযান শুরু করেন। কলোরাডো এবং অন্যান্য আশেপাশের নদীগুলির জল, শোধিত বর্জ্য জলের সাথে মিশিয়ে পাঠিয়ে, শুষ্ক দক্ষিণ-পশ্চিম অ্যারিজোনার অনেক ভূগর্ভস্থ জলাশয়ের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। উষ্ণ জলবায়ু বিগত বছরের খারাপ খরা সত্ত্বেও এই জলের স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ থাইল্যান্ডের ব্যাংকক অববাহিকায় ১১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে জল সরবরাহ করতে করতে, ভূগর্ভস্থ জলের স্তর ১৯৮০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে বছরে ২ ফুটের বেশি কমে যাচ্ছিল। ব্যাংককের নীচের জলস্তর কমে যাওয়ার জন্য জমি বসে যাচ্ছিল এবং পানীয় জলের গুণমান খারাপ হচ্ছিল। থাই সরকার ১৯৮০-এর দশকে ভূগর্ভস্থ জল-ব্যবহারের চার্জ বাড়াতে শুরু করেন, যা প্রতি ঘনমিটারে ৩.৫ বাট থেকে বেড়ে ১৭ বাট হয়। এভাবে চলার পর স্থানীয় জলাশয়গুলি বেশ কিছুটা পুনরুদ্ধার হওয়াতে সরকার ২০১২ সালে জলকর কিছুটা কম করেছিলেন।
টাকসন এবং ব্যাংককের মধ্যে “জল চেতনা”-য় মিল আছে। উভয়ই দীর্ঘ সময়ের জন্য জল সরবরাহ বজায় রাখতে লড়াই করেছিল, লোকেদের জল কম ব্যবহার করতে উৎসাহ দিয়েছিল। গবেষণা অনুসারে কিছু স্থানে, শতাব্দীর শুরুর তুলনায় আগে যা ছিল, তার থেকে অর্ধেকেরও বেশি জলাশয় বৃষ্টিপাত বাড়ার জন্য পুনরায় ভর্তি হয়েছে। তবে এই ধরনের এলাকা বিরল। পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে মানুষের জল সচেতনতা বাড়াতে হবে, তাদের জলসম্পদের মূল্য বোঝা খুব প্রয়োজনীয়। মানুষের জল ব্যবহার আরও পরিমিত হওয়া দরকার।