ভ্রমর এক সামাজিক প্রাণী, রানীসহ তারা চাক বাঁধে। এদের চাকগুলো মৌমাছির তুলনায় ছোটো, এদের বাসাতে ৫০ টির মতো ভ্রমর বাস করে। এরা কিন্তু মধু তৈরি করে না। এরা ফসল এবং বন্য ফুলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরাগায়নকারী। ভ্রমরের চারটি ডানা থাকে, পেছনের দুটি ডানা ছোটো এবং সাধারণত সামনের ডানার সাথে আটকে থাকে। প্রতি সেকেন্ডে এরা ১৩০-২৪০ বার ডানা নাড়ায়। কীটনাশকের জন্য ইউরোপ জুড়ে ভ্রমরের ক্ষতি হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ভ্রমররা তাদের বাসাগুলিতে যে পরাগ সংগ্রহ করে এবং সংরক্ষণ করে তা একাধিক কীটনাশক দ্বারা দূষিত।
গবেষণা দেখায় যে চাষে কীটনাশকের দক্ষ ব্যবহার বিশেষ করে ভ্রমরের জন্য অপরিহার্য। মাঠে পতঙ্গের ওপর কীটনাশকের প্রভাব দেখা হয় না, দেখা হলেও তার মধ্যে একটা উপাদানের কী প্রভাব আছে শুধুমাত্র তা দেখা হয়। কিন্তু পতঙ্গরা নানা ধরনের কীটনাশকে উন্মুক্ত হয়, কারণ তারা বিভিন্ন ধরনের কৃষিক্ষেত্রে খাদ্য খুঁজে বেড়ায়। মৌমাছির জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত কীটনাশক মৌমাছির দেহে, তাদের খাদ্যে, তাদের বাসা তৈরির কাঠামো মোম ও মাটিতে পাওয়া গেছে।
আটটি ইউরোপীয় দেশে কৃষিজমিতে ১০৬ টা জায়গা থেকে বাণিজ্যিকভাবে পালন করা ৩০০ টারও বেশি ভ্রমর কলোনি স্থাপন করে, তাদের চাক থেকে পরাগ নমুনা সংগ্রহ করে এবং ২৬৭ টা কীটনাশকের জন্য তাদের স্ক্রীন করে,লান্ড ইউনিভার্সিটি এবং ট্রিনিটি কলেজ অফ লন্ডন -এর গবেষকরা দেখেছেন – ভ্রমরের সংগৃহীত পরাগে অন্তত ৮ টা কীটনাশক উপস্থিত থাকে কোথাও কোথাও ২৭টা অবধি কীটনাশকের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে। তাদের চাকের ওজন দেখা গেছে বেশি কীটনাশক থাকলে কম হচ্ছে, এমনকি এখানে কম ভ্রমর তৈরি হচ্ছে। আর বিস্তৃত চাষের জমিতে এই প্রবণতা বেশি, ফুল চাষ বা মফস্বলের খোলা জায়গার তুলনায়।
কৃষিতে কীটনাশক ব্যবহারের পদ্ধতি পরিবর্তন করা, বা এর ব্যবহার কমানো সবচেয়ে ভালো। জলবায়ু পরিবর্তনের পক্ষে উপযুক্ত এবং রাসায়নিকের উপর কম নির্ভরশীল চাষের পদ্ধতি বিকাশের জন্য ১৭ বিলিয়ন ডলার সহ COP28-এ নেওয়া প্রতিশ্রুতি এ বিষয়ে জরুরি বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। দ্য নেচার কনজারভেন্সি, গুগল এবং ব্রাজিলিয়ান স্টেট অফ প্যারা পুনরুত্পাদনশীল চাষের অনুশীলনকে উত্সাহিত করতে, কম মাটি চষা, কম কীটনাশক ব্যবহার প্রভৃতি উদ্যোগ নিয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগ এই সমস্ত পরাগায়নকারী পতঙ্গের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।