বছরের পর বছর ধরে গবেষণার ফলে এমন টেলিস্কোপ তৈরি করা গেছে যা আকাশের বিস্তৃত অংশ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম, এবং অটোমেশনের মাধ্যমে পুরো আকাশজুড়ে ম্যাপিং করতে পারে। আগে আকাশ সমীক্ষা সম্পূর্ণ হতে কয়েক বছর সময় লাগত, কিন্তু এখন আধুনিক আকাশ সমীক্ষা সপ্তাহ বা দিনের ক্রম অনুসারে আকাশের পরিবর্তন নজর করতে পারে। উন্নত টেলিস্কোপের মাধ্যমে আকাশ জুড়ে পরিবর্তন দেখার এই সক্ষমতা আমাদের জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানা আকর্ষণীয় দিক দেখাতে শুরু করেছে।
একটি ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করে লুকিয়ে থাকা এমন তারা প্রকাশ করা গেছে যা আগে লক্ষ করা হয়নি। মান্থলি নোটিস অফ রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি -তে প্রকাশিত নিবন্ধের সিরিজে, লেখক ভিসিবল অ্যান্ড ইনফ্রারেড সার্ভে টেলিস্কোপ (VISTA) থেকে এক দশক-দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। VISTA দক্ষিণ গোলার্ধের চিলিতে ESO এর Cerro Paranal Observatory -তে অবস্থিত একটি প্রশস্ত ক্ষেত্র জরিপ টেলিস্কোপ, এতে রয়েছে ইনফ্রারেড ক্যামেরা VIRCAM (VISTA Infrared Camera)। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা VISTA-র মাধ্যমে ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কয়েক মিলিয়ন তারার উপর নজর রাখতে পারেন।
এই দল প্রায় ২০০ টি তারার উপর ফোকাস করেছেন, যাদের উজ্জ্বলতার মধ্যে নানা পরিবর্তন ঘটে। এই ক্ষণস্থায়ী পরিবর্তনগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে নক্ষত্রের সূক্ষ্ম গতিশীলতা প্রকাশ পায়। অধ্যয়নের একটি লক্ষ্য ছিল নবীন নক্ষত্র সন্ধান করা। প্রথম দিকে তারাগুলো ফিউশন-চালিত নক্ষত্রে রূপান্তরিত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নির্বাচিত তারার মধ্যে ৩২টা বিস্ফোরিত প্রোটোস্টার খুঁজে পেয়েছেন। এই তারাগুলো অন্তত ৪০ গুণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং কিছু তারা ৩০০ গুণ উজ্জ্বল হয়েছে।
বিস্ফোরণগুলো কয়েক মাস বা বছর ধরে স্থায়ী হয়েছিল, তরুণ তারাকে ঘিরে থাকা পদার্থের ডিস্কের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে বলে মনে হয়। গতিশীলতার ভিত্তিতে এই বিস্ফোরণগুলো তরুণ নক্ষত্রের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে, কিন্তু এতে গ্রহ গঠন কঠিন হয়ে যেতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই অশান্ত প্রোটোস্টারদের স্কুয়ালিং নবজাতক নাম দিয়েছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আমাদের ছায়াপথে ২১ টা রেড জায়ান্ট স্টার দেখেছেন, যাদের উজ্জ্বলতা পরিবর্তন হয়ে চলেছে। এই নতুন ধরনের তারার নাম দেওয়া হয়েছে, ওল্ড স্মোকার।
আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্র ভারী উপাদানে সমৃদ্ধ, তাই এই রেড জায়ান্ট স্টারগুলোর মধ্যে উচ্চ ধাতব পদার্থ রয়েছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা ধুলোর মেঘ ছড়িয়ে দেয় যা কিছু সময়ের জন্য সেই তারাকে অস্পষ্ট করে দেয়। তাই নক্ষত্রটির দৃশ্যমানতা সাময়িকভাবে বিবর্ণ হয়ে যায় এবং তারপর মেঘ সরে গেলে পুনরায় উজ্জ্বল হয়। ছায়াপথে নির্গত ভারী ধাতব পদার্থ কীভাবে নতুন তারারা ব্যবহার করতে পারে সেই বিষয়ে গবেষকদের ধারণা পাল্টাচ্ছে।