সৌরজগতের বাইরের এক গ্রহে নতুন সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। গ্রহটিতে রয়েছে জলের চিহ্ন। ফলে এই গ্রহ এখন বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের কেন্দ্রে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন আমাদের সৌরজগতের বাইরের সবচেয়ে ছোটো গ্রহটিতে রয়েছে জলীয় বাষ্প। এটি একটি “ল্যান্ডমার্ক আবিষ্কার” যা জ্যোতির্বিদ্যাকে পৃথিবীর মতো অন্যান্য গ্রহের এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে আসে৷ গবেষণাটি দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারসে প্রকাশিত হয়েছে।
নাসা এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় দ্বিগুণ, GJ 9827d গ্রহটি ৯৭ আলোকবর্ষ দূরে একটি লাল বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। গবেষকের দলটি দুটি পরিস্থিতির কথা অনুমান করেছেন- গ্রহটি হয়তো বা “মিনি-নেপচুন”-এর মতো যার হাইড্রোজেন-সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল রয়েছে, অথবা এটি বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপার একটি উষ্ণ সংস্করণ, যার নীচে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণে জল রয়েছে। ইউনিভার্সিটি ডি মন্ট্রিলের বিজর্ন বেনেকে বলেছেন যে GJ 9827d গ্রহটির অর্ধেক জল, অর্ধেক পাথর হতে পারে এবং সম্ভবত কিছু ছোটো ছোটো পাথরের উপরে অনেক পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকতে পারে। তিন বছরের ব্যবধানে, হাবল টেলিস্কোপ ১১টি ট্রানজিয়েন্টের সময় গ্রহটিকে পর্যবেক্ষণ করেছে, বা সেই সময় দেখেছে যখন গ্রহটি তার তারার সামনে দিয়ে অতিক্রম করেছে। এই সময়ে, তারার আলো গ্রহের বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যায়, যার ফলে হাবলের যন্ত্র ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আলোর রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়, যা জলের অণুর রহস্য উন্মোচন করে। গবেষকরা মনে করেন GJ 9827d গ্রহের জল-সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল থাকলেও তা উষ্ণ। এর উষ্ণতা শুক্রের মতো ৮০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা। ওই তাপমাত্রায় মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব। কারণ ওই তাপমাত্রা গ্রহটিকে বাষ্পময় করে তুলবে। কিন্তু এই আবিষ্কার GJ 9827d এবং অনুরূপ গ্রহগুলোর ভবিষ্যতের অধ্যয়নের পথ প্রশস্ত করে, বিশেষ করে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে, যা তার উচ্চ রেজোলিউশনযুক্ত ইনফ্রারেড ছবি ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন সহ আরও বায়ুমণ্ডলীয় অণুর সন্ধান করতে পারে৷ নাসা এ-ও জানিয়েছে, GJ 9827d-র বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে হাবল টেলিস্কোপ যে খোঁজ পেয়েছে তা যে ১০০ শতাংশ সঠিক, সেটা এখনই হলফ করে বলা যাচ্ছে না। এই নিয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে বলেও জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ১৯৯০ সাল থেকে পৃথিবীর কক্ষপথে রয়েছে। বহুমুখী গবেষণার উদ্দেশ্যে মহাকাশে পাঠানো সেই টেলিস্কোপকে মহাকাশ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে মনে করা হয়। হাবল টেলিস্কোপে একটি ২.৪ মিটার আয়না রয়েছে। টেলিস্কোপের পাঁচটি প্রধান যন্ত্রের সাহায্যে মহাকাশের গুরুত্বপূর্ণ ছবি ওই টেলিস্কোপে ধরা পড়ে।