মানুষ জীবনের সন্ধানে মহাকাশ অভিযান করে চলেছে, আর এই লক্ষে সবচেয়ে কাছের গ্রহ মঙ্গলে অভিযান চলছে আর বিভিন্ন তথ্য গবেষকরা সন্ধান করছেন, এই সন্ধানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল জলের সন্ধান। মার্স এক্সপ্রেস পনেরো বছর আগে মঙ্গল গ্রহের বিষুবরেখা, মেডুসা ফোসি ফরমেশন (MFF) অধ্যয়ন করে ২.৫ কিলোমিটার গভীর কিছু জমা হয়ে আছে তার সন্ধান পেয়েছিল, কিন্তু এই সংগৃহীত বস্তু কী, তা আগে জানা যায়নি। নতুন অধ্যয়নে দেখা গেছে, এই জমার পরিমাণ ৩.৭ কিলোমিটার, আর র্যাডার সিগন্যালে ধরা পড়েছে, এখানে বহু প্রত্যাশিত বরফ জমা হয়ে আছে। গবেষকদের অনুমান এই বরফ গলে গেলে এই লাল গ্রহ ১.৫ থেকে ২.৭ কিলোমিটার অবধি জলের নীচে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। মার্স এক্সপ্রেসের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ দেখিয়েছিল যে MFF অংশের রাডার তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ এবং ঘনত্ব কম, এই ধরনের বৈশিষ্ট্য আমরা জমা বরফ থেকে দেখতে পাই। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা আর একটা সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারেননি, যে এই বৈশিষ্ট্য বায়ুপ্রবাহিত ধূলিকণা, আগ্নেয়গিরির ছাই বা পলির বিশাল সঞ্চয় থেকেও হতে পারে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের আন্দ্রেয়া সিচেটি বলেছেন, নতুন রাডার ডেটা অনুযায়ী এটার গভীরতা দেখলে বোঝা যায়, MFF যদি ধূলিকণার বিশাল স্তূপ হত তাহলে এটার নীচের অংশ ওপরের ওজনের চাপে দৃঢ়ভাবে আটকে যেত। তাহলে যা রাডারে দেখা যাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ঘনত্ব তৈরি করত৷ নতুন ফলাফল অনুযায়ী ধূলো ও বরফের স্তরের ওপরে কয়েকশো মিটার জুড়ে গুঁড়ো ধূলো ও ছাইয়ের আস্তরণ রয়েছে।
মঙ্গল গ্রহকে শুষ্ক গ্রহ বলে মনে করা হত, কিন্তু গ্রহের পৃষ্ঠের বিভিন্ন লক্ষণ থেকে বোঝা যায় এখানে একসময় প্রচুর পরিমাণে জল ছিল। সেই লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে শুকনো নদী নালা, প্রাচীন মহাসাগর এবং হ্রদের খাতের চিহ্ন। গবেষকরা এর বিশাল মেরু ক্যাপে, বিষুবরেখার কাছে মাটির মধ্য জমা জলে বরফের উল্লেখযোগ্য ভাণ্ডার পেয়েছেন। এই গ্রহের শুষ্ক পৃষ্ঠের নীচে বিষুবরেখার কাছাকাছি বরফের বিশাল ভাণ্ডার এই গ্রহের বর্তমান জলবায়ুতে তৈরি হয়নি, এগুলো পূর্ববর্তী জলবায়ুর সময়ে গঠিত হয়েছে। কলিন উইলসন, মার্স এক্সপ্রেস এবং ইএসএ এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটার (টিজিও) এর ইএসএ প্রকল্প বিজ্ঞানী বলেছেন, এই সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ মেডুসা ফোসি গঠন সম্পর্কে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, যেমন – এই বরফ কত আগে জমা হয়েছিল? সেই সময় মঙ্গল গ্রহ কেমন ছিল? জলের বরফ বলে গবেষকরা নিশ্চিত হলে, এই সম্পদ মঙ্গল গ্রহের জলবায়ুর ইতিহাস সম্পর্কে গবেষকদের চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করবে। এই জলের যে কোনো জলাধার মানুষ বা রোবোটের অন্বেষণের একটি আকর্ষণীয় লক্ষ হবে। আর পরবর্তী সময়ে এই গ্রহ লক্ষ করে মিশনে এর বিষুবরেখার কাছাকাছি পৌঁছোলেই চলবে, এর মেরু অঞ্চল লক্ষ করে রকেট উৎক্ষেপণের প্রয়োজন পড়বে না।