২৬০০ -১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাম্র যুগে অখন্ড ভারতে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো, লোথাল, কালিবঙ্গানে সিন্ধুনদীর অববাহিকায় নগরকেন্দ্রিক সিন্ধুসভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ওই একই সময়ে মিশর ও মেসোপটেমিয়াতেও প্রাচীন সভ্যতা বিকাশিত হয়েছিল। প্রচলিত মতবাদ অনুযায়ী সিন্ধু সভ্যতার পতনের পর ও লৌহ যুগের মাঝে ভারতীয় ইতিহাসের সময়কাল ‘অন্ধকার যুগ’ নামে পরিচিত। বলা হয়ে থাকে গান্ধার, কোশল, অবন্তী এই নগরগুলির কোনো অস্তিত্ব ছিল না এগুলি পৌরাণিক কাহিনি।
আইআইটি খড়গপুর, ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ, ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি, জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ও ডেকান কলেজের যৌথ অধ্যয়নে হরপ্পার পতনের পরে ভারতের ভাদনগরে সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার প্রমাণ পুনরুদ্ধার করা গেছে। এই পাঁচটি সংস্থার তরফ থেকে গুজরাটের ভাদনগরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে গবেষকদের দল এখানে মানব বসতির প্রমাণ পেয়েছেন। এই বসতি ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সমসাময়িক, যা বৈদিক যুগের শেষ দিকে বা বৌদ্ধ-পূর্ব মহাজনপদ বা ষোড়শ মহাজনপাদের সমসাময়িক। তাদের মতে এই দীর্ঘ ৩০০০ বছরে বিভিন্ন রাজ্যের উত্থান এবং পতন এবং মধ্য এশিয়ার যোদ্ধাদের ভারতে বারবার আক্রমণ, বৃষ্টিপাত বা খরার মতো জলবায়ুর তীব্র পরিবর্তন দ্বারা চালিত হয়েছিল।
বর্তমান সময়ের ৪০০০ বছর আগে সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার পতন এবং লৌহ যুগের উদ্ভবের মাঝের সময়কালে মহাজনপদ শহর যেমন গান্ধার, কোশল, অবন্তী খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ২৫০০ এর মধ্যে বছরের মধ্যে প্রায়ই চিত্রিত করা হয়। আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক এবং গবেষণাপত্রের প্রধান-লেখক অনিন্দ্য সরকার জানিয়েছেন, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সময়কে ‘অন্ধকার যুগ’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু ভাদনগরে প্রাপ্ত “প্রমাণ” যা একটি একক দুর্গ তা ভাদনগরকে এই সময়ের প্রাচীনতম একটি শহর হিসেবে দাখিল করছে। গবেষকদের কিছু সাম্প্রতিক রেডিওকার্বন ডেটিং থেকে বোঝা গেছে যে এই দুর্গ ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ের হতে পারে, যা হরপ্পার-পরবর্তী সময়ের সমসাময়িক। তাদের মতে সমস্ত প্রমাণ সত্য হলে এটি ভারতের ইতিহাসের একটি সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার প্রমাণ।