মানুষের হাতের এবং পায়ের আঙুল আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাইরের দিকে বৃদ্ধি পায় না, বরং আমাদের এই অঙ্গগুলো একটি বড়ো কুঁড়ি আকারের মধ্যে বিকশিত হয়। বর্তমানে জানা গেছে ঠিক কীভাবে এই বিকাশ ঘটে। এর আগে, মেরুদণ্ডী প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান মূলত ইঁদুর, মুরগির ভ্রূণ এবং ল্যাব-উত্থিত স্টেম সেলের মতো মডেল জীবের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। যদিও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর সাথে মানুষের বেশ কিছু মিল রয়েছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাদের বিকাশ স্পষ্টতই আমাদের থেকে আলাদা। প্রারম্ভিক অঙ্গ গঠনের বিবরণ প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণেও কিছুটা অস্পষ্ট, এবং গবেষণার জন্য ১৪ দিনের বেশি সময় ধরে মানব ভ্রূণ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে,যা কঠোর নৈতিক বিধানের অধীনে শিথিল করা হয়েছে। এখনও অবধি দেখা গেছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রাথমিকভাবে ভ্রূণের দেহের পাশ থেকে বেরিয়ে আসা আকারহীন অঙ্গের কুঁড়ি হিসাবে গঠিত হয়। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে, আট সপ্তাহ পরে সেই কুঁড়ির মতো গঠন হাতের ও পায়ের আঙুল সমেত স্বতন্ত্র, শনাক্তযোগ্য অঙ্গে রূপান্তরিত হয়। প্রাথমিক ভ্রূণের বিকাশের একটি উল্লেখযোগ্য প্রক্রিয়া যা যুক্তিযুক্তভাবে আমাদের মানব বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অন্যতম তা হল আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ বা বুড়োআঙুলের বিরোধী অবস্থান। ২০১৪ সালে, বিজ্ঞানীরা বর্ণনা করেছিলেন কীভাবে নির্দিষ্ট অণুগুলো ভ্রূণের বিকাশের সুনির্দিষ্ট মুহুর্তে প্রকাশিত হয়ে হাতের ও পায়ের আঙুলের গঠনকে ছাঁচে ফেলে। বর্তমানে চিনের সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোশ জীববিজ্ঞানী বাও ঝাং-এর নেতৃত্বে গবেষকের দল, ৫ থেকে ৯ সপ্তাহের বিকাশের সময়কালীন ভ্রূণের কলা থেকে হাজার হাজার একক কোশ বিশ্লেষণ করে সেই প্রক্রিয়াটিকে চমৎকার বিশদভাবে বর্ণনা করেছে। গবেষকরা জিনের অভিব্যক্তির ধরন চিহ্নিত করে দেখেন যে জেনেটিক নির্দেশাবলী কীভাবে আঙুল গঠন করে। গবেষকরা দেখেন IRX1 জিনের অভিব্যক্তি যা আঙুল গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং SOX9 হাড়ের গঠনের জন্য অপরিহার্য একটি জিন, অঙ্গ বিকাশের সময় পাঁচটি স্বতন্ত্র দৈর্ঘ্যে ওভারল্যাপ করে। বিকাশের প্রায় ৭ সপ্তাহে, দৈর্ঘ্যের মাঝের নির্দিষ্ট কিছু কোশের মৃত্যু হয় যা MSX1 এর অভিব্যক্তির সাথে যুক্ত, এবং হাত ও পায়ের আঙুল গড়ে ওঠে। পাথরের টুকরো খোদাইয়ের মতো এই জিনগুলোর অভিব্যক্তির সাথে সাথে অপ্রয়োজনীয় কোশ সরে যায় এবং আমাদের হাত ও পায়ের আঙুল ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়ায় ছোটোখাটো ত্রুটির কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকৃতি দেখা দিতে পারে, যা ৫০০ জনের মধ্যে ১ জনের ক্ষেত্রে ঘটে ও তাদের জন্মগত ত্রুটি হিসেবে দেখা দেয়। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাটি দেখিয়েছে যে মানুষ এবং ইঁদুরের অঙ্গ গঠন একই রকম গতিপথ অনুসরণ করে, যদিও কিছু সক্রিয় জিন এবং কোশের প্রকারের পার্থক্য রয়েছে।