সমগ্র বিশ্ব তার জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো পরিত্যাগ করার জন্য সংগ্রাম করছে, বিজ্ঞানীরা অধ্যয়ন করছেন যে বায়ুমণ্ডলীয় জিওইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাহায্যে উষ্ণতা সীমিত করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় এড়ানো যায় কিনা। এর একটি সম্ভাব্য পদ্ধতি হল সোলার রেডিয়েশন ম্যানেজমেন্ট (এসআরএম), যাতে সূর্যের রশ্মিকে মহাশূন্যে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করে। এ নিয়ে সবচেয়ে সুপরিচিত প্রস্তাবটি হল সালফার ডাই অক্সাইড, কুল্যান্ট বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরে বিস্ফোরিত করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং বেশ কয়েকটি পরিবেশবিদের গোষ্ঠী এই বিষয়ে সুযোগ এবং ঝুঁকি, এর কার্যকারিতা সম্পর্কে নানা আলোচনা বিতর্ক চালু রাখছেন। বর্তমানে মূলত তাত্ত্বিক আলোচনা চলছে, আর মাত্র কয়েকটি ছোটো-বড়ো প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হল বায়ুমণ্ডলে সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) ইনজেকশন বা বিস্ফোরণের ধারণা। ইউএস ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে এই ধারণাটি প্রস্তাব করেছিল, যখন বিজ্ঞানীরা নথিভুক্ত করেছিলেন যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, যা বাতাসে প্রচুর পরিমাণে SO2 ছড়িয়ে দেয়, তা গ্রহে শীতল প্রভাব ফেলে।
গত এক দশকে চীন বা বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যেমন মেক্সিকো, ইউরোপে অথবা জনসাধারণের প্রতিবাদে ক্ষতিকারক বায়ু দূষণকারী হিসাবে SO2 ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। ৬০ জন বিজ্ঞানীর একটি দল গত বছর একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ চালু করেছিলেন যার লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন দেশে সৌর জিওইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষাগুলি নিষিদ্ধ করানোর জন্য রাজি করানো। এরা সতর্ক করেছিলেন যে এসআরএম -এর ঝুঁকিগুলি খুব বেশি এবং এটি আবহাওয়ার ধরণ, কৃষি এবং খাদ্য ও জলের মৌলিক চাহিদাগুলি প্রভাবিত করতে পারে। সমালোচকরা এমন মডেলের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যা দেখায় যে এসআরএম বর্ষাকে ব্যাহত করতে পারে এবং আফ্রিকা ও এশিয়ায় খরা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যরা বলেন যে এটি ওজোন স্তরের পুনরুদ্ধারকে ধীর করে দিতে পারে বা অ্যাসিড বৃষ্টি বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
সামুদ্রিক মেঘ উজ্জ্বলকরণ সহ অন্যান্য সম্ভাব্য কম বিপজ্জনক এসআরএম প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে, যেখানে মেঘকে আরও প্রতিফলিত বানাতে জাহাজ থেকে সমুদ্রের জল স্প্রে করা হবে। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের অধ্যাপক বেঞ্জামিন সোভাকুল বলেছেন, যদিও এই পদ্ধতিগুলি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক অ্যারোসল ইনজেকশনের চেয়ে কম অনুপ্রবেশকারী এবং কম ক্ষতিকারক, তবে এগুলো ব্যয়বহুল এবং খুব শক্তি-নিবিড়।
ইউএনইপির প্রধান বিজ্ঞানী আন্দ্রেয়া হিনউড বলেছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে লোকেরা যেন বুঝতে পারে যে এসআরএম প্রযুক্তিগুলি জলবায়ু সংকটের সমাধান করে না কারণ তারা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে পারে না বা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলিকে বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে পারে না। এর প্রভাবও শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী হবে, দেশগুলিকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এসআরএম মোতায়েন করতে বাধ্য করা হবে। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেটারের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ লরা উইলকক্স বলেছেন, একবার এটি শুরু করলে এটি চালিয়ে যেতে হবে, একবার বন্ধ করলেই সেই বর্ধিত উষ্ণতা রাতারাতি দেখা যাবে। তাই এটি একটি বিপজ্জনক খেলা।