আমরা জানি একটি সুষম এবং বৈচিত্র্যময় খাদ্যতালিকা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন শরীরের মেদ ঝরানোর চেষ্টা করি তখন আমরা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন অপসরণ করি। আমরা এও জানি যে ফল পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। কিন্তু আমরা কী কখনো ভেবে দেখেছি যে শুধু ফল সহযোগে সীমিত মেয়াদের উপবাস আদৌ আমাদের অপ্রয়োজনীয় ফোলাভাব কমিয়ে, তরতাজা অনুভব করতে সাহায্য করবে কিনা? উদাহরণস্বরূপ, শুধুমাত্র ফল খেয়ে ৩-দিন কাটানো যা অনেক সময় ফলের ডায়েট বা ফ্রুটেরিয়ান ডায়েট নামে পরিচিত, আমাদের শরীরকে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ করতে পারে। নারায়না সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের ডাঃ পঙ্কজ ভার্মার মতে শুধুমাত্র ফল খেয়ে ৭২ ঘন্টা অতিবাহিত করলে তা আমাদের শরীরের উপর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় প্রভাব ফেলতে পারে। ইতিবাচক দিক বিচার করলে দেখা যায় যে ফল ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা হজমশক্তি উন্নত করে, শরীরে শক্তির মাত্রা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে উপস্থিত জল শরীরের জলের চাহিদাও পূরণ করে।
খাদ্যতালিকায় শুধুমাত্র ফল রাখলে শরীরে প্রোটিন, ফ্যাট এবং নির্দিষ্ট ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে। ডাঃ ভার্মা ব্যাখ্যা করেছেন যে পেশী মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আবার অন্যদিকে ফ্যাট হরমোন উত্পাদন সহ বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়। বর্ধিত সময় ধরে যদি শরীরে পুষ্টির অভাব ঘটে তবে পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ক্লান্তি বোধ হয় এবং সম্ভাব্য পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও, একটি সম্পূর্ণ ফল-ভিত্তিক খাদ্যতালিকার কারণে আমাদের শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে পারে যেহেতু ফলে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে। আমরা মনঃসংযোগ হারাতে পারি বা আমাদের বিরক্তির উদ্রেক হতে পারে।
এক্ষেত্রে যদিও কেউ কেউ প্রাথমিকভাবে ওজন হ্রাস করতে সক্ষম হয় কিন্তু ফলের প্রাকৃতিক শর্করা ওজন বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে যখন প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই ধরনের খাবারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত কারণ ফল রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাছাড়াও ফলে উপস্থিত চিনি ও অম্লতা দাঁত ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ায়। কমলালেবু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যেতে পারে। শুধু ফলমূল খাওয়ার ফলে ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, আয়োডিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এই ঘাটতির ফলে রক্তাল্পতা, ক্লান্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং কম ক্যালসিয়ামের জন্য অস্টিওপোরোসিস হতে পারে।
প্রধানত ফলের উপর নির্ভর করলে শরীরে ক্ষুধা নিবারণ হয় না কারণ শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ফ্যাট এবং প্রোটিনের অভাব থাকে। ফলত বিপাকীয় প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলে কারণ শরীর অত্যাবশ্যক কার্যের জন্য শক্তি সঞ্চয় করার প্রয়াস করে। অন্যদিকে ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ ফল শরীর ফোলা ভাব আনে। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অপাচ্য ফ্রুক্টোজের ফার্মেন্টেশন অস্বস্তিকর গ্যাসের সৃষ্টি করে এবং ফোলাভাব আনে। ভাজা খাবারের থেকে ফলমূল স্বাস্থ্যকর বিকল্প হওয়া সত্ত্বেও, অতিরিক্ত ফল, বিশেষ করে প্রতিটি খাবারের সময়ে, চিনির আকর্ষণ বৃদ্ধি করে। কিন্তু পেট ভরানো প্রোটিন এবং ফ্যাটের অভাবের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে পারে, এবং খাবারের পরপরই ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে বাড়িয়ে দেয়। ডাঃ ভার্মার মতে, এই জাতীয় খাদ্যতালিকা বিবেচনা করার আগে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। যদিও স্বল্পমেয়াদী ফল-কেন্দ্রিক ডায়েট থেকে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন খাবার দিয়ে তৈরি একটি সুষম খাদ্যতালিকা আরও কার্যকরী বলে মনে করা হয় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।