তাজা কাটা ঘাসের গন্ধ থেকে প্রিয়জনের গায়ের গন্ধ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমরা গন্ধের সম্মুখীন হই। প্রতিনিয়ত নানান ধরনের গন্ধ আমাদের ঘিরে থাকে তাছাড়াও আমাদের শরীর গন্ধ তৈরি করে, এবং তা এতই স্বতন্ত্র যে এই গন্ধের মাধ্যমে আমরা একজনের থেকে অন্যজনকে আলাদা করতে পারি। মানুষের শরীরের ঘ্রাণ বিভিন্ন কারণে নির্গত হয়। গবেষকদের মতে জিনের একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ, মেজর হিস্টোকম্প্যাটিবিলিটি কমপ্লেক্স, ঘ্রাণ উৎপাদনে একটি বড়ো ভূমিকা পালন করে। এই জিনগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত এবং নির্দিষ্ট প্রোটিন এবং রাসায়নিকের উৎপাদন এনকোড করে শরীরের গন্ধকে প্রভাবিত করে। কিন্তু শরীর এই ঘ্রাণ তৈরি করার পরও আমাদের শরীরের নির্দিষ্ট ঘ্রাণ স্থির হয় না। ঘাম, তেল এবং অন্যান্য নিঃসরণ আমাদের ত্বকের পৃষ্ঠে যাওয়ার সাথে সাথে, জীবাণু এই যৌগগুলোকে ভেঙে ফেলে রূপান্তরিত ও পরিবর্তিত করে, গন্ধ যোগ করে এবং আমাদের একটা নিজস্ব গন্ধ তৈরি হয়। এই মিলিত ঘ্রাণ আমাদের শরীর থেকে নির্গত হয় এবং আমাদের চারপাশের পরিবেশে তার অস্তিত্বের জানান দেয়। এই ঘ্রাণ একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে বা শনাক্ত করতে এবং সেইসাথে সুস্থ এবং অসুস্থ মানুষের মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অন্য ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলে আমরা তাদের স্পর্শ না করে তাদের শরীরের তাপ অনুভব করতে পারি, এমনকি খুব কাছাকাছি না গিয়েও তাদের শরীরের গন্ধও পেতে পারি। মানবদেহের স্বাভাবিক উষ্ণতা চারপাশের বাতাসের সাথে তাপমাত্রার পার্থক্য তৈরি করে। আমাদের শরীর আমাদের চারপাশের বাতাসকে উষ্ণ করে তোলে, শরীর ঘিরে একটা উষ্ণ স্রোত তৈরি করে। গবেষকরা মনে করেন আমরা প্রতিনিয়ত শরীর থেকে লক্ষ লক্ষ ত্বকের কোশ ঝেড়ে ফেলছি যার সাহায্যে আমাদের শরীরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে। এই গ্রন্থিযুক্ত ত্বকের কোশের ক্ষরণ এবং আমাদের শরীরের জীবাণু, এই দুই উপাদানের সংমিশ্রণে আমাদের শরীরের ঘ্রাণ নির্গত হয় এবং আমাদের আশেপাশে জমা হয়। আমাদের ত্বক থেকে নির্গত গ্যাসে উপস্থিত উদ্বায়ী জৈব যৌগের সমন্বয়ে গঠিত আমাদের শরীরের ঘ্রাণ। ঘ্রাণের প্রধান উপাদান আমাদের অভ্যন্তরীণ কারণ যেমন জাতি, লিঙ্গ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। দ্বিতীয়পর্যায়ভুক্ত উপাদানের কারণ হল চাপ, খাদ্য এবং অসুস্থতার উপর ভিত্তি করে এবং পারফিউম ও সাবানের মতো বাহ্যিক উত্স থেকে তৃতীয় উপাদানগুলো আমাদের নিজস্ব একটি গন্ধ তৈরি করে। ঘ্রাণের উপর ভিত্তি করে আজ গবেষকরা একজন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য বলে দিতে পারছেন। গবেষকরা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে মানুষের শরীরের ঘ্রাণের পার্থক্য নিয়ে গবেষণা করছেন। মানুষের গন্ধ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রটি বছরের পর বছর ধরে এগিয়ে চলেছে এবং কীভাবে এটি গঠন হয় ও ফরেনসিক প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তা নিয়েও গবেষণা চলছে।