প্রায় ৪১% উভচর প্রাণী যার মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, সালামান্ডার অন্তর্গত তাদের বেশিরভাগ প্রজাতি আজ বিলুপ্তির পথে। এমন কথাই বলছেন জেনিফার লুয়েডটকে, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের একজন সংরক্ষণবিদ। তার মতে যে কোনও মেরুদণ্ডী প্রাণীর চেয়ে এই উভচর প্রাণীর বিলুপ্তির হার অনেক বেশি যেখানে হাঙর এবং রে-এর বিলুপ্তির হার ৩৭%, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ২৭%, সরীসৃপের ২১% এবং পাখিদের ক্ষেত্রে ১৩%। ২০০৪ সালেও উভচর প্রাণীদের ৩৯% প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। একই পরিস্থিতি ১৯৮০ সালে ঘটেছিল যখন বিলুপ্তির হার ৩৮% ছিল, তাই গবেষক লুয়েডটকের মতে দীর্ঘ সময়ের জন্য উভচর প্রাণীরা বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তির সবচেয়ে সাধারণ কারণ যা তাদের প্রভাবিত করে তা হল বাসস্থানের ক্ষতি এবং অবক্ষয়, অধ্যয়ন করা প্রজাতির ৭৭% ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষিকাজের জন্য। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন যা ২৯% উভচর প্রাণীকে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। গবেষকদের মতে প্রতিটি কারণ অন্যান্য কারণের সঙ্গে সংযুক্ত।
লুয়েডটকে এবং তার সহকর্মীরা শনাক্ত করতে চেয়েছিলেন কোন কারণের জন্য বেশি সংখ্যায় বিলুপ্তি ঘটছে। তাই তারা ৭৮৮টি প্রজাতির একটি উপসেট দেখেছিল যেগুলো ১৯৮০ এবং ২০২২-এর মধ্যে, IUCN রেড লিস্ট স্ট্যাটাস স্তরের অনেক নীচে চলে গেছে – বা সুরক্ষিত নয় এমন প্রজাতি থেকে বিপন্ন প্রজাতির দিকে এগিয়ে গেছে। তারা দেখেন যে, ২০০৪ সালে, রোগের কারণে সেই প্রজাতির উপসেটের ৫৪% হ্রাস পেয়েছিল। সেই সময়ে, ছত্রাকের প্যাথোজেন কাইট্রিড বিশ্বজুড়ে ব্যাঙের জনসংখ্যাকে ধ্বংস করে দিচ্ছিল। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন শুধুমাত্র ১% প্রজাতির হ্রাসের কারণ ছিল। এখন, প্রায় ২০ বছর পরে, জলবায়ু পরিবর্তন ৩৯% প্রজাতির হ্রাসের কারণ। লুয়েডটকে বলেছেন যে এখনও অনুসন্ধানটি সম্ভবত একটি সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেনি কারণ জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন, চরম আবহাওয়া এবং দাবানল উভচরদের কীভাবে প্রভাবিত করে তার বিশদ বিবরণ অধ্যয়নে এখনও প্রকাশিত হচ্ছে। প্রতিটি অঞ্চলে উভচর প্রাণীদের বিলুপ্তির আলাদা কারণ রয়েছে। যেমন, কাইট্রিডের প্রাদুর্ভাব, বিশ্বের বহু অঞ্চলে দেখা গিয়েছিল, তবে ১৯৭০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাতে এর প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল। নিউ গিনি এবং আফ্রিকা অনেকটাই এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পেয়েছিল, যদিও সম্প্রতি সাব-সাহারান আফ্রিকায় এই রোগজীবাণু উদ্ভূত হতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়া জুড়ে, বাসস্থানের ক্ষতি হল উভচর প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ। যদিও ইউরোপে একটি নতুন উদীয়মান ছত্রাকের প্যাথোজেন যার নাম ব্যাট্রাকোকাইট্রিয়াম সালামান্ড্রিভোরান্স সালামান্ডারের সংখ্যাকে প্রভাবিত করছে। উত্তর আমেরিকায় ২০০ টিরও বেশি ধরনের সালামান্ডারের আবাসস্থল, বিশ্বের সালামান্ডার প্রজাতির এক চতুর্থাংশেরও বেশি। সৌভাগ্যবশত এটি এখনও এই মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েনি। গবেষণায় জানা গেছে উত্তর আমেরিকার উভচরের সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তন। সম্ভবত সংরক্ষিত এলাকার উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে উভচর প্রাণীদের বিলুপ্তির ঝুঁকির মধ্যে একটি উন্নতির প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। গবেষকরা বলছেন কার্যকর বাসস্থান সুরক্ষা একটি লক্ষণীয় পার্থক্য আনতে পারে, এবং এটা স্পষ্ট যে বর্তমান প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস অ্যামফিবিয়ানস রিপোর্ট- জ্যামাইকা, ব্রাজিলের আটলান্টিক ফরেস্ট এবং ভিয়েতনামের সেন্ট্রাল অ্যানামাইট হাইল্যান্ডস সহ বিশ্বজুড়ে ৫০টি সংরক্ষণ এলাকা চিহ্নিত করেছে যেখানে উভচর প্রাণীরা যারা বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রজাতিরা বেশি সংখ্যায় বসবাস করে।