আমাদের সৌরজগতে সূর্য নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পরে কেমন দেখাবে? সৌরজগতের শেষ দিনগুলো কেমন হবে এবং কখন এই ঘটনা ঘটবে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং আমরা মানুষেরা সূর্যের এই শেষের দিনগুলো দেখার জন্য আর থাকবো না। পূর্বে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন সূর্য একটি নেবুলায় পরিণত হবে – গ্যাস এবং মহাজাগতিক ধূলিকণার একটি আলোকিত বুদবুদ –কিন্তু বর্তমানে জানা যাচ্ছে ঘটনাটি আরও বৃহদাকারে ঘটবে। সূর্যের বয়স প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর– যা সৌরজগতের সমসাময়িক অন্যান্য বস্তুর বয়সের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়েছে। অন্যান্য নক্ষত্রের পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে এটি আরও ১০ বিলিয়ন বছরের মধ্যে তার জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। প্রায় ৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে সূর্য একটি লাল দৈত্য বা রেড জায়েন্টে পরিণত হতে চলেছে। নক্ষত্রটির মূল অংশ সঙ্কুচিত হবে, তবে এর বাইরের স্তরগুলি মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ অবধি প্রসারিত হবে, এবং তা পৃথিবীকেও গ্রাস করবে কিন্তু সেই সময় আমরা, মানুষেরা সেখানে থাকবো না। প্রকৃতপক্ষে, মানবতার কাছে মাত্র ১ বিলিয়ন বছর বাকি আছে কারণ সূর্যের উজ্জ্বলতা প্রতি বিলিয়ন বছরে প্রায় ১০% বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও শুনে মনে হচ্ছে এখনও অনেক দেরী আছে তবে উজ্জ্বলতার এই বৃদ্ধি পৃথিবীতে ধীরে ধীরে জীবনের অস্তিত্ব শেষ করে দেবে। মহাসাগর বাষ্পীভূত হবে, এবং জল গঠনের জন্য ভূপৃষ্ঠ অত্যন্ত গরম হয়ে উঠবে। মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে সূর্য, রেড জায়েন্টে পরিণত হওয়ার আগে নিজের চেয়ে দ্বিগুণ আকার ধারণ করতে পারে। ২০১৮ সালের গবেষণায় কম্পিউটার মডেলিং ব্যবহার করে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, ৯০% অন্যান্য নক্ষত্রের মতো, আমাদের সূর্য একটি লাল দৈত্য থেকে সঙ্কুচিত হয়ে সাদা বামনে বা হোয়াইট ডোয়ার্ফে পরিণত হবে। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ আলবার্ট জিজলস্ট্রা ব্যাখ্যা করেছেন, যখন একটি নক্ষত্র নিঃশেষ হয়ে যায় তখন এটি মহাকাশে নক্ষত্রের ভরের অর্ধেক গ্যাস এবং ধূলিকণা নির্গত করে। অত:পর নক্ষত্রের জীবনের জ্বালানি শেষ হয়ে যায়, অবশেষে সেটি নিভে যায়। নিভে যাওয়ার আগে নক্ষত্রের কেন্দ্রটি তার বাইরের আবরণটিকে প্রায় ১০,০০০ বছর ধরে উজ্জ্বলভাবে জ্বলতে সাহায্য করে। ফলে নেবুলা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে এবং কিছু নেবুলা এতই উজ্জ্বল যে সেগুলোকে লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরত্ব থেকে দেখা যায়। গবেষক দলটি যে ডেটা মডেল তৈরি করেছে তা বিভিন্ন নক্ষত্রের জীবনচক্রের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ধারণা দেয়, এবং বিভিন্ন তারার ভরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্ল্যানেটারি নেবুলার উজ্জ্বলতা গণনা করতে সাহায্য করে। সূর্যের থেকে ১.১ গুণের কম ভরের একটি তারা দৃশ্যমান প্ল্যানেটারি নেবুলা তৈরি করতে পারবে না আবার অন্য দিকে, সূর্যের চেয়ে তিনগুণ বেশি বৃহত্তর তারা উজ্জ্বল নেবুলা তৈরি করবে। নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে দূরবর্তী ছায়াপথে কয়েক বিলিয়ন বছর বয়সী তারার উপস্থিতি পরিমাপ করার জন্য আমাদের কাছে যেমন উপায় রয়েছে তেমনই আজ আমরা খুঁজে পেয়েছি যে সূর্য কীভাবে নিঃশেষ হয়ে যাবে।