বিস্তারিত গবেষণা থেকে জানা গেছে যে প্রিবায়োটিক অর্থাৎ নির্দিষ্ট ধরনের ফাইবার যা সাধারণত উদ্ভিদে উপস্থিত থাকে তা গ্রহণ করলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বিকাশ ঘটে এবং অন্ত্রের সুষম মাইক্রোবায়োম সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়, কোন খাবারে সর্বোচ্চ প্রিবায়োটিক উপাদান রয়েছে তা নির্ধারণ করতে গবেষকরা বিদ্যমান গবেষণার সাহায্যে অসংখ্য খাদ্য সামগ্রীতে প্রিবায়োটিক মাত্রা মূল্যায়ন করেছেন। গবেষণা অনুসারে যেসব খাবারে বেশি পরিমাণে প্রিবায়োটিক উপাদান রয়েছে তা হল ড্যান্ডেলিয়ন গ্রিনস, কচু, রসুন, পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজ গোত্রীয় সবুজ গাছ । অন্ত্রের জীবাণুকে সাহায্য করার পাশাপাশি, প্রিবায়োটিক-সমৃদ্ধ খাবারে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে – যা বেশিরভাগ মানুষই পর্যাপ্ত পরিমাণে খান না। প্রিবায়োটিক, যাকে মাইক্রোবায়োমের খাদ্য হিসেবে ভাবা যেতে পারে, প্রোবায়োটিকের থেকে আলাদা। প্রোবায়োটিকে জীবন্ত অণুজীব থাকে। উভয়ই সম্ভাব্যভাবে মাইক্রোবায়োম স্বাস্থ্যের উপকার করতে পারে, তবে তারা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে বেশি মাত্রায় প্রিবায়োটিক গ্রহণের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়, ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের আরও ভালো শোষণ এবং পরিপাক হয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। যদিও বর্তমানে বেশিরভাগ খাদ্যতালিকার নির্দেশিকা প্রিবায়োটিক উপাদান গ্রহণের কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণের নির্দেশ দেয়নি, তবে ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোবায়োটিকস অ্যান্ড প্রিবায়োটিকস – একটি বৈজ্ঞানিক সংস্থা যা বর্তমানে প্রিবায়োটিকের সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠা করেছে – তারা প্রতিদিন ৫ গ্রাম করে প্রিবায়োটিক খাওয়ার সুপারিশ করে। গবেষকরা ফুড অ্যান্ড নিউট্রিয়েন্ট ডেটাবেস ফর ডায়াটারি স্টাডিসে উল্লিখিত ৮৬৯০টি খাবারের প্রিবায়োটিক উপাদান বিশ্লেষণ করেন। উল্লিখিত খাবারের প্রায় ৩৭% খাবারে প্রিবায়োটিক পাওয়া গেছে। সেগুলোর মধ্যে ড্যানডেলিয়ন গ্রিনস, কচু, রসুন, পেঁয়াজ জাতীয় গাছ এবং পেঁয়াজে সর্বাধিক পরিমাণে প্রিবায়োটিক পাওয়া যায়- প্রতি গ্রাম খাদ্যে প্রায় ১০০-২৪০ মিলিগ্রাম প্রিবায়োটিক রয়েছে। অন্যান্য প্রিবায়োটিক-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজের বিভিন্ন ধরন, বরবটি, শতমূলী প্রভৃতি যার প্রতি ১ গ্রামে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মিলিগ্রাম প্রিবায়োটিক থাকে। একজন ব্যক্তিকে ৫ গ্রাম প্রিবায়োটিক পেতে ছোটো পেঁয়াজের অর্ধেক খেতে হবে। গম জাতীয় খাদ্যের অবস্থান তালিকার নীচে রয়েছে। অল্প বা কোনো প্রিবায়োটিক উপাদান নেই এমন খাবারের মধ্যে রয়েছে দুগ্ধজাত খাদ্য, ডিম, তেল এবং মাংস।
গবেষকরা আশা করেন যে গবেষণাটি অন্যান্য বিজ্ঞানীদের প্রিবায়োটিকের স্বাস্থ্যের প্রভাব মূল্যায়ন করতে এবং ভবিষ্যতের খাদ্যতালিকা নির্দেশিকা তৈরিতে সাহায্য করবে। তারা উল্লেখ করেছেন যে রান্না কীভাবে প্রিবায়োটিক সামগ্রীকে প্রভাবিত করে তা বোঝার জন্য এবং একাধিক উপাদান রয়েছে এমন খাবারগুলোকে আরও ভালোভাবে মূল্যায়ন করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।