অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে একটি সমীক্ষায় বলা হচ্ছে যে প্রাকৃতিক শিলার ক্ষয় কার্বন ডাইঅক্সাইডের একটি বড়ো উত্স হিসাবে কাজ করে, যা আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফল জলবায়ু পরিবর্তনের মডেলিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন পাহাড়ের শিলায় লক্ষ লক্ষ বছর আগে বসবাসকারী গাছপালা এবং প্রাণীদের প্রাচীন দেহাবশেষ থেকে প্রাপ্ত কার্বনের একটি বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। এর মানে হল “ভূতাত্ত্বিক কার্বন চক্র” একটি থার্মোস্ট্যাট হিসাবে কাজ করে যা পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, বৃষ্টির জলে পাওয়া মৃদু অ্যাসিড শিলাগুলোর বিভিন্ন খনিজের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় শিলাকে ক্ষয়প্রাপ্ত করে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি সারা বিশ্বে ক্রমাগত আগ্নেয়গিরি দ্বারা নিঃসৃত কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক কার্বন চক্রের অংশ গঠন করে যা এক বিলিয়ন বছর বা তারও বেশি সময় ধরে পৃথিবী পৃষ্ঠকে বাসযোগ্য রাখতে সাহায্য করেছে।
এই নতুন গবেষণায় শিলা থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া পরিমাপ করা হয়েছে, যা সারা বিশ্বের আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মতোই তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমানে, এই প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক কার্বন চক্রের বেশিরভাগ মডেলে অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রক্রিয়াটি ঘটে যখন প্রাচীন সমুদ্রের তলদেশে গঠিত শিলাগুলি (যেখানে গাছপালা এবং প্রাণীগুলি পলিতে চাপা পড়েছিল) পৃথিবীর পৃষ্ঠের দিকে ঠেলে উঠে আসে, যেমনভাবে এই প্রক্রিয়ার হিমালয় বা অ্যান্ডিসের মতো পর্বতমালা তৈরি হয়েছিল। এটি শিলাগুলিতে থাকা জৈব কার্বন বাতাস এবং জলের অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে, যা বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড মুক্ত করতে পারে। এইজন্য গবেষকরা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি শিলাগুলিতে কতটা জৈব কার্বন রয়েছে তা খুঁজে বের করেছেন আর খাড়া পাহাড়ী অবস্থানের কোথায় সবচেয়ে দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে তা খুঁজে বের করেছেন। গবেষকরা বলছেন, যদিও বর্তমান সময়ে মানুষের নির্গমনের তুলনায় শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কম, কিন্তু এই প্রাকৃতিক প্রবাহ ভালোভাবে বোঝা গেলে আমাদের কার্বন বাজেটের পূর্বাভাস ভালোভাবে দেওয়া সম্ভব হবে।