ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের ম্যামোলজি শাখার কিউরেটর কেনি ট্র্যাভোউইলন ও তার দল দেখেন যে তাদের জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা ১২৫টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী অতিবেগুনি রশ্মিতে ফ্লুরোসেন্ট আভার বিচ্ছুরণ করছে। প্লাটিপাস এবং ওয়ামব্যাট কয়েক বছর আগে বায়োফ্লুরোসেন্ট প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল। এই আলোকিত আভা শুধুমাত্র এদের মধ্যে দেখা গেছে তা নয় পরীক্ষিত স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রতিটি প্রজাতি অতিবেগুনী রশ্মির আলোকে সবুজ, নীল, গোলাপী বা সাদা বর্ণ নির্গত করে। যেমন লাল শেয়ালের কানের ভেতরটা ফ্লুরোসেন্ট সবুজ রঙের আবার মেরু ভালুক ব্ল্যাকলাইটে সাদা টি-শার্টের মতো জ্বলছিল, ঠিক যেমন জ্বলছিল জেব্রার সাদা ডোরা এবং চিতাবাঘের হলুদ পশম। এক প্রজাতির বাদুড়ের ডানা সাদা কঙ্কালের মতো দেখাচ্ছিল কিন্তু তাদের পশম গোলাপী হয়ে উঠেছিল। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে স্তন্যপায়ী পরিবারের অর্ধেকের ফ্লুরোসেন্স আভা উপস্থিত রয়েছে। এই আভা বিশেষ করে দেখা গেছে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নরম পশমে, গোঁফে বা হুইস্কারে, নখর, দাঁত এবং চামড়ায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে শুধুমাত্র ডোয়ার্ফ স্পিনার ডলফিন প্রজাতির কোনো বাহ্যিক ফ্লুরোসেন্স ছিল না; শুধুমাত্র তাদের দাঁতে ফ্লুরোসেন্ট আভা দেখা গিয়েছিল।
কোনো একটি রাসায়নিক যৌগ যেমন প্রোটিন যদি অতিবেগুনী আলো শোষণ করে এবং তারপরে দীর্ঘতর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো নির্গত করে তখন ফ্লুরোসেন্স আভা তৈরি হয়। এই ফ্লুরোসেন্স প্রবাল, সামুদ্রিক কচ্ছপ, ব্যাঙ, বিছা, নিউ ওয়ার্ল্ড ফ্লাইং কাঠবিড়ালি, তোতাপাখি, খরগোশ, মানুষ এবং ডর্মিসের মধ্যে দেখা গেছে। জীববিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চালিয়েছেন যে এই ফ্লুরোসেন্ট আভা কোনো বিবর্তনীয় সুবিধা প্রদান করে নাকি কেবল পৃষ্ঠের রসায়নের জন্য সৃষ্ট। তবে গবেষকদের মতে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য ফ্লুরোসেন্সের কোনো নির্দিষ্ট জৈবিক ভূমিকা আছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। নখ, ত্বক, দাঁত, হাড়, কুইলস, গোঁফ এবং নখরে উপস্থিত কেরাটিন নামক একটি প্রোটিন বায়োফ্লুরোসেন্ট, কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যটি বিবর্তনের একটি দুর্ঘটনাও হতে পারে। কেরাটিন আনপিগমেন্টেড বা ফ্যাকাশে রঙের চুলেও ফ্লুরোসেন্স সৃষ্টি করে। হলুদ-সাদা পশমের কারণে সাউদার্ন মার্সুপিয়াল মোল (নোটোরিক্টেস টাইফ্লপস) ছিল সবচেয়ে ফ্লুরোসেন্ট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একটি। কিন্তু এই প্রজাতি মাটির নীচে বাস করে। গবেষকরা যখন রঙিন পশমে ফ্লুরোসেন্স দেখেছিলেন তারা অনুমান করেন যে কেরাটিন ছাড়া অন্য একটি রাসায়নিক এই প্রভাব তৈরি করছে, যেমন ফ্লুরোফোরস। যে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা রাতে, সন্ধ্যায় বা ভোরবেলায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে তারা কম আলোতে আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠতে ফ্লুরোসেন্স ব্যবহার করে। গবেষকরা বলেন যে নিশাচর প্রজাতির মধ্যে ফ্লুরোসেন্স সবচেয়ে সাধারণ এবং সবচেয়ে তীব্র দেখা গেছে। প্লাটিপাস জলের নীচে শিকার করে কিন্তু তারা চোখ বুজে থাকে তাই তাদের জ্বলন্ত পেটের পশমের সেই রকম কার্যকারিতা নেই। কিন্তু গবেষকদের ধারণা এটি কাউন্টারশেডিং নামক ছদ্মবেশ বা ক্যামোফ্লেজের একটি অংশ হতে পারে, যা অনেক জলজ প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়। অথবা সম্ভবত প্লাটিপাস শিকারী এবং শিকার, যাদের চোখ আলোর এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য উপলব্ধি করতে পারে, তাদের কাছ থেকে নিজেদের আড়াল করার জন্য অতিবেগুনী আলো প্রতিফলিত করার পরিবর্তে শোষণ করে।