নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রকাশিত নতুন কাজ অনুসারে, কেঁচো বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, দেখা যায় এরা প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত শস্য উৎপাদনের প্রায় ৬.৬ শতাংশে এবং ২.৩ শতাংশ শিম উৎপাদনে অবদান রাখে। CSU গবেষকদের নতুন অনুমান অনুযায়ী বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদক দেশ, রাশিয়ার বার্ষিক উৎপাদিত ১৪০ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল, গম, রাই, ওটস, বার্লি, ভুট্টা এবং বাজরা প্রভৃতি শস্য খাদ্য উৎপাদনের জন্য কেঁচো দায়ী।
কেঁচো একাধিক উপায়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে সমর্থন করে চাষের জন্য ভালো মাটি তৈরি করতে সাহায্য করে। কেঁচো মাটির ভালো কাঠামো তৈরি করে, জল ধরে রাখায় সহায়তা করে এবং উপকারী জৈব পদার্থ যোগ করে যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য পুষ্টি যোগায়। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে কেঁচো উদ্ভিদ-বৃদ্ধি-উন্নয়নকারী হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে এবং উদ্ভিদকে সাধারণ মাটির রোগজীবাণু থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণা ইঙ্গিত করেছে যে কেঁচো উদ্ভিদের সামগ্রিক উত্পাদনশীলতা প্রায় ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষকরা কেঁচোর প্রাচুর্য, মাটির বৈশিষ্ট্য, সার দেওয়ার হার এবং ফসলের ফলনের মানচিত্র অনুযায়ী বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনে কেঁচোর অবদান অনুমান করেছেন। বিশ্লেষণে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে বিশ্বের দক্ষিণদিকের দেশে শস্য উৎপাদনে কেঁচো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে যেমন সাব-সাহারান আফ্রিকায় শস্য উৎপাদনের ১০ শতাংশে এবং লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানে দ্বীপপুঞ্জে ৮ শতাংশ শস্য উৎপাদনে এদের প্রভাব আছে।
গবেষক বলেছেন, সম্ভবত কেঁচোগুলো চাষের ক্ষেত্রে সেই অঞ্চলে অবদান বেশি, যেখানে কৃষকদের সার এবং কীটনাশক কম ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। পরিবর্তে, সেই অঞ্চলে কৃষকেরা সার এবং ফসলের অবশিষ্টাংশের মতো কেঁচো-সমৃদ্ধ জৈব পদার্থের উপর বেশি নির্ভরশীল, এই সব স্থানে উদ্ভিদের উপর কেঁচোর উপকারী প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, যদি মাটিকে টেকসই রাখার জন্য সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হয়, তাহলে এই জীববৈচিত্র্যকে আরও ভালভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে আরও টেকসই কৃষি-ইকোসিস্টেম তৈরি করা যায়। এই গবেষণা সেই সম্ভাবনার সন্ধান দিচ্ছে।