অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সংখ্যায় হ্রাস পাওয়া বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। পরিবেশের কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং মাটির নীচে জৈব পদার্থের পচন- এই দুটি কাজই অমেরুদণ্ডী প্রাণীরা করে থাকে আর তাই বাস্তুতন্ত্রে এর বড়ো প্রভাব দেখা যাচ্ছে। জার্মান সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ বায়োডাইভারসিটি রিসার্চ (iDiv) এবং লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে কারেন্ট বায়োলজিতে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা অনুসারে অমেরুদণ্ডী প্রাণীর হ্রাস শুধুমাত্র বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষতি সাধন করে তাই নয় প্রক্রিয়াগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, যা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার দাবি করে। পৃথিবীতে বর্ণিত সমস্ত প্রজাতির প্রায় ৭৫% অমেরুদণ্ডী প্রাণী দ্বারা গঠিত যেমন পোকামাকড় এবং অন্যান্য আর্থ্রোপড, শামুক, স্লাগ এবং নেমাটোড। এরা বাস্তুতন্ত্রের একটি মৌলিক অংশ, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যেমন পরাগায়ন, পচন এবং প্রাকৃতিক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ। সাম্প্রতিক দশকে মানুষের সৃষ্ট কিছু পরিবেশগত পরিবর্তন, বিশেষ করে ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তন, ল্যান্ডস্কেপ সরলীকরণ এবং অন্যান্য প্রাণীদের আবাসস্থলের ক্ষতি এবং রাসায়নিক দূষণ সহ নগরায়ন বিশ্বব্যাপী অমেরুদণ্ডী প্রাণীর হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, এই ক্ষতির সম্ভাব্য প্রভাব পরিমাপ করা এখনও পর্যন্ত বেশ কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে। গবেষকদের একটি দল এই কাজের জন্য iDiv Ecotron ব্যবহার করেছেন। এটি বেশ কয়েকটা নিয়ন্ত্রিত মিনি-ইকোসিস্টেম বা ইকোইউনিট নিয়ে গঠিত যার মাধ্যমে এই জটিল সম্প্রদায়গুলোর প্রভাব অধ্যয়ন করা যেতে পারে। গবেষকরা পরীক্ষা করেন কীভাবে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের কার্যাবলী এবং উদ্ভিদ বৈচিত্র্য ২৪ টি স্বতন্ত্র তৃণভূমি বাস্তুতন্ত্রে মাটির উপরে থাকা তিনটি স্তরে অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের জৈবভরের (১০০%, ৩৬% এবং ০%) ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। বিগত দশকে জার্মানীর তৃণভূমি অঞ্চলে ৩৬% জৈবভর অমেরুদণ্ডী প্রাণীর নাটকীয় হ্রাসকে প্রতিফলিত করে। গবেষকরা দেখেন যে অমেরুদণ্ডী প্রাণীর জৈবভর হ্রাস পেলে বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবার সংখ্যাও হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ, স্থলভাগের অমেরুদণ্ডী প্রাণী প্রাকৃতিক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে অমেরুদণ্ডী প্রাণীর হ্রাসের ফলে গাছের পোকা এফিড বা মাকড়ের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ফলত খাদ্য শৃঙ্খলের উঁচু স্তরে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়, ফসল উৎপাদন এবং অন্যান্য বাস্তুতন্ত্রের কার্যাবলীতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। তাছাড়াও, ভূমির উপরিভাগের অমেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্ষতির ফলে ভূগর্ভস্থ জৈববস্তুর পচনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সত্ত্বেও, বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পূর্বে ক্লিন ওয়াটার আইন অনুসরণ করে মিষ্টি জলের কীটপতঙ্গের সংখ্যা বৃদ্ধি করা গেছে। তাত্ক্ষণিক সুরক্ষা ব্যবস্থা হয়তো বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী সম্প্রদায় এবং গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের কার্যাবলী সুরক্ষিত করতে ফলদায়ক প্রতিপন্ন হতে পারে।