সেলিব্রিটিরা বছরের পর বছর ধরে সমস্ত ধরণের বিদেশী ডায়েট প্রবণতাকে জনপ্রিয় করেছেন। সেলিব্রিটিদের মধ্যে একটা প্রবণতা হল “দিনে একবার খাবার” ডায়েট বা “ওএমএডি”। এর অনেক সমর্থক দাবি করেন যে এটি তাদের ওজন ঠিক রাখতে এবং ফিট রাখতে সাহায্য করে। ওএমএডি মূলত অন্যান্য ধরণের উপবাসের এক চূড়ান্ত সংস্করণ, যেমন ইন্টারমিটেন্ট ডায়েটিং ও সময়-সীমাবদ্ধ রেখে খাওয়া। নির্দিষ্ট দিনে উপোস বা শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাওয়ার পরিবর্তে, ওএমএডি অনুসরণকারীরা তাদের দিনের সমস্ত ক্যালোরি একটা বড়ো একক খাবারে খায়।
ওএমডি স্বাস্থ্যের উপকার করতে পারে এই দাবির বেশিরভাগ উপাখ্যানমূলক, বা এই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে বলা হয় যে অন্য উপোস যদি কাজ করে তবে ওএমডি ও কাজ করবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সময়-সীমাবদ্ধ খাওয়া (যেখানে আপনি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার দিনের সমস্ত ক্যালোরি খান) মানুষের ওজন ঠিক রাখতে সহায়তা করতে পারে। এবং এর অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যেমন রক্তচাপ কমানো, রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করা, প্রদাহের মাত্রা হ্রাস করা এবং লোকেদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রনে আরও ভালোভাবে সাহায্য করা। একজন ব্যক্তির স্থূলতা, টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটির গবেষণায় মানুষের মধ্যে ওএমডি- এর প্রভাবের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। এই গবেষণায়, অংশগ্রহণকারীদের অধ্যয়নের সময়কালের জন্য প্রতিদিন খাওয়ার জন্য একই ক্যালোরি দেওয়া হয়েছিল। অধ্যয়নের অর্ধেক সময়কালে অংশগ্রহণকারীরা একটা একক খাবারে এই ক্যালোরি খেয়েছিল , তারপর তাদের এই ক্যালোরি প্রতিদিন তিনটি খাবারে বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি খাবারের প্যাটার্ন শুধুমাত্র ১১ দিনের জন্য অনুসরণ করা হয়েছিল । একক খাবার বিকাল ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র ১১ জন অংশগ্রহণকারী অধ্যয়ন সম্পন্ন করতে পেরেছেন। যখন অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিন মাত্র একবার খাবার খেয়েছিলেন, তাদের শরীরের ওজন এবং চর্বির ওজনে একটা বৃহত্তর হ্রাস দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দিনে মাত্র একবার খাবার খাওয়ার সময় অংশগ্রহণকারীদের চর্বিহীন ভর এবং হাড়ের ঘনত্বও হ্রাস পেয়েছিল। তাই বলা হচ্ছে, দীর্ঘ সময়ের জন্য ডায়েট অনুসরণ করলে পেশির কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে ওএমডি নিয়ে গবেষণায় নানা ধরনের ব্যক্তি, দীর্ঘ সময় এর প্রভাব এসব নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন আছে।
যদি কেউ দিনে একবার খাবার খান তবে তাদের জন্য তাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি, বিশেষত কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার এবং মূল ভিটামিন এবং খনিজের চাহিদা মেটানো বেশ কঠিন হবে। এই সব পুষ্টি পর্যাপ্ত পরিমাণ না পেলে পেশির ভর হ্রাস পায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি, অন্ত্র দুর্বল হতে পারে। তাই একক দৈনিক খাবারের সময় প্রোটিন এবং প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, বাদাম, বীজ এবং কিছু ফল এবং আস্ত শস্য ভালো পরিমাণ খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ক্যালসিয়াম এবং আয়োডিনের প্রয়োজনীয়তা যাতে পূরণ হয় তা নিশ্চিত করার জন্য দুগ্ধজাত খাবার বা তার বিকল্প উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার খাওয়া দরকার।
আমাদের মাথায় রাখতে হবে সেলিব্রেটিরা নিউট্রিশানিস্টদের পরামর্শ নেন, নানা ধরনের পরিপূরক গ্রহণ করেন, তাই তাদের জীবনযাত্রার সাথে সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাস না মেলানোই ভালো।