বিজ্ঞানীদের মতে মানুষের মস্তিষ্ক অনেকটা উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটারের মতো কাজ করে যার সাহায্যে সে উন্নত ধরনের গণনা করতে সক্ষম, আর গোটা বিশ্বকে বোঝার জন্য বেজিয়ান ইনফারেন্স নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি নির্দিষ্ট গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন যেখানে কোনো জিনিস দেখার পরে মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তা তুলে ধরা হয়েছে। মডেলটি বেজিয়ান ইনফারেন্স ব্যবহার করেছে। বেজিয়ান ইনফারেন্স হল একটি পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি যার মাধ্যমে নতুন প্রমাণের সাথে পূর্বের জ্ঞানের সমন্বয়ে কোনোকিছু অনুমান করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি কুকুর কেমন দেখতে এবং আমরা চার পা বিশিষ্ট একটি লোমশ প্রাণী দেখতে পেলে আমাদের পূর্ব জ্ঞান ব্যবহার করে অনুমান করতে পারবো যে এটি একটি কুকুর। এই অন্তর্নিহিত ক্ষমতা মানুষকে অসাধারণ নির্ভুলতা এবং দ্রুততার সাথে পরিবেশকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম করে তোলে।
সিডনির স্কুল অফ সাইকোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ রুবেন রিডোক্স বলেছেন বেজিয়ান ইনফারেন্স পদ্ধতির ধারণাগত আবেদন এবং ব্যাখ্যামূলক শক্তি সত্ত্বেও, মস্তিষ্ক কীভাবে সম্ভাব্যতা গণনা করে তা আজও রহস্যময়। নতুন গবেষণাটি এই রহস্যের উপর আলোকপাত করেছে। আমাদের মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের মৌলিক কাঠামো এবং সংযোগগুলো এমনভাবে নির্মিত যে প্রাপ্ত সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে এটি বেজিয়ান ইনফারেন্স বা অনুমান করতে সক্ষম। এই অনুসন্ধানটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এই গবেষণার সাহায্যে আমরা জানতে পেরেছি যে আমাদের মস্তিষ্কের একটি অন্তর্নিহিত কাঠামো বা নকশা রয়েছে যা তথ্যের প্রক্রিয়াকরণে সাহায্য করে ও আমাদের চারপাশকে আরও কার্যকরভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম করে তোলে। গবেষণাটি মস্তিষ্কের শুধুমাত্র বেজিয়ান ইনফারেন্সের মতো অনুমান পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কে বিদ্যমান তত্ত্বকে সমর্থন করে তাই নয় বরং গবেষণাক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনের দ্বার উন্মুক্ত করে, যেখানে মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক ক্ষমতা সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করে, যেখানে ভবিষ্যতে এই ধরনের মস্তিষ্কের কাজ অনুকরণ করে মেশিন লার্নিং, ক্লিনিকাল নিউরোলজিতে বিপ্লব আনা যেতে পারে।