এই প্রথম গবেষকরা একটি প্রাচীন কাদামাটির ইট থেকে ডিএনএ খণ্ড বের করতে সক্ষম হয়েছেন। ইউরোপের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডেনমার্কের জাতীয় জাদুঘর ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখিয়েছেন কীভাবে প্রাণীর বর্জ্য এবং খড়ের মধ্যে ছোটো ছোটো উদ্ভিদের কণা সহস্রাব্দ ধরে ইটের ভিতরে সুরক্ষিত থাকতে পারে। এখন যাকে আমরা উত্তর ইরাক বলি সেখানে প্রায় ২৯০০ বছর আগে টাইগ্রিস নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষ নদীর তীরে পাওয়া মাটির সঙ্গে তুষ, খড় বা পশুর গোবর মিশিয়ে এই ইট তৈরি করেছিল। গবেষকরা এক বিশ্লেষণমূলক প্রকৌশল ব্যবহার করে ইটের ওই নমুনা থেকে উদ্ভিদের ডিএনএ সিকুয়েন্সকে ডিকোড করতে সক্ষম হয়েছেন এবং ৩৪টি স্বতন্ত্র উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস চিহ্নিত করেছেন । অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী সোফি লুন্ড রাসমুসেন বলেছেন যে ২৯০০ বছরের পুরানো ইট থেকে তারা এই প্রাচীন ডিএনএ আবিষ্কার করেছেন যা কার্যকরভাবে মাটির ভিতরে সুরক্ষিত ছিল। প্রাচীন কালহু শহরে অবস্থিত নব্য-অ্যাসিরিয়ান সভ্যতার রাজা দ্বিতীয় আশুর্নাসিরপালের প্রাসাদে এই ইটটি পাওয়া গেছে। ৮৭৯ থেকে ৮৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই প্রাসাদটি নির্মাণা করা হয়েছিল, আর কাদামাটির একটি শিলালিপির মধ্যে এই তথ্য লিপিবদ্ধ ছিল।
ইটের মধ্যে যে সব গোত্রীয় উদ্ভিদের ডিএনএ-র প্রাচুর্য দেখা গেছে তাদের মধ্যে রয়েছে বাধাঁকপি ও সর্ষে গোত্রীয় Brassicaceae, Ericaceae, Betulaceae, Lauraceae, গাজর এবং পার্সলে গোত্রীয় Selineae এবং ঘাস গোত্রীয় Triticeae । গবেষকের দলটি শুধু উদ্ভিদের ডিএনএ-তে মনোনিবেশ করেছিল কারণ উদ্ভিদের ডিএনএ সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল, তবে একই কৌশল প্রাণীর ডিএনএ খোঁজার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। সারা বিশ্বজুড়ে প্রচুর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে কাদামাটির ইট পাওয়া যায় এবং গবেষকরা আশাবাদী যে সেই সময়ের বাস্তুতন্ত্র এবং পরিবেশ সম্বন্ধে এই ইট নতুন তথ্য প্রকাশ করতে পারবে। এই ক্ষেত্রে, মাটির ইটটি রোদে শুকিয়ে শক্ত করা হয়েছিল। তারা যদি ইট আগুনে পুড়িয়ে শুকনো করত তবে ওই জৈব উপাদানগুলো সংরক্ষণ করা যেত না। এর মধ্যমে প্রাচীন সভ্যতার এক সম্যক ধরণা উঠে আসে, জানা যায় হাজার হাজার বছরে আমাদের পৃথিবী কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।