বিজ্ঞানীরা পুরানো প্লাস্টিককে সাবানে রূপান্তর করে প্লাস্টিককে এক নতুন জীবন দান করেছেন। প্লাস্টিক রাসায়নিকভাবে ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো, আর সাবানের অন্যতম প্রধান উপাদান হল ফ্যাটি অ্যাসিড। ভার্জিনিয়া টেকের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক গুওলিয়াং লিউয়ের মতে এই মিলটির জন্য পলিথিনকে ফ্যাটি অ্যাসিডে এবং তারপরে সাবানে রূপান্তর করা সম্ভব। কিন্তু বাধ সেধেছিল আকার: আণবিকভাবে, প্লাস্টিক খুব বড়ো, প্রায় ৩০০০ কার্বন পরমাণু লম্বা, সেখানে ফ্যাটি অ্যাসিড আকারে অনেক ছোটো। তারপর খ্রিস্টমাসের সময় তিনি দেখেন যে ফায়ার প্লেসে কাঠ পুড়ছে। সেই কাঠ পোড়ায়, যে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে তা কাঠের ছোটো ছোটো কণা দ্বারা গঠিত। লিউ তখন ভাবেন যে প্লাস্টিক পোড়ানো হলে একইভাবে কাজ করতে পারে। কাঠ প্রধানত পলিমার যেমন সেলুলোজ দিয়ে তৈরি। জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হলে এই পলিমারগুলো ছোটো ছোটো চেইনে ভেঙে যায় এবং তারপরে কার্বন ডাই অক্সাইডে রূপান্তরিত হওয়ার আগে ছোটো বায়বীয় অণুতে ভাঙে। তিনি অনুমান করেন যে যদি একইভাবে সিন্থেটিক পলিথিন অণুকে ভেঙে গ্যাসীয় অণুতে পরিণত হওয়ার পূর্বেই বন্ধ করে দেওয়া যায় , তবে শর্ট-চেইন, পলিথিনের মতো অণু পাওয়া যেতে পারে।
লিউ এবং তার সহকর্মীরা একটি চুল্লি তৈরি করেছিলেন যা নিরাপদে প্লাস্টিক পোড়াতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই চুল্লির নীচের তাপমাত্রা পলিমার চেইনগুলোকে ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট উত্তপ্ত ছিল, তুলনামূলকভাবে উপরের অংশটির তাপমাত্রা অনেকটাই কম রাখা হয়েছিল যাতে গ্যাসে পরিণত হওয়ার আগে তাদের ভাঙাটা রোধ করা যায়। গবেষকরা সেই অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করে এক ধরণের মোম তৈরি করেন যার থেকে সাবান তৈরি হয়। কিন্তু সেই সাবানের রঙটা একটু ভিন্ন ধরনের।
পলিথিন এবং পলিপ্রোপিলিন হল দুটি খুব সাধারণ ধরনের প্লাস্টিক। আমাদের যে প্লাস্টিক বর্জ্য রয়েছে, যার পরিমাণ প্রতি বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন টন, তার প্রায় ৫০% এই দুটি মিলে তৈরি করতে পারে। লিউ-এর পদ্ধতি এই দু ধরনের প্লাস্টিকের ওপরে কাজ করে। প্লাস্টিক বর্জ্যের ৮০%- এর বেশি ল্যান্ডফিলে যায়, আর ১০%- এরও কম পুনর্ব্যবহার করা হয়। লিউয়ের পদ্ধতি যে ধরনের প্লাস্টিকের উপর কাজ করে তা স্বাভাবিক উপায়ে পুনর্ব্যবহৃত করা যায় না। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা সবাই ওয়াকিবহাল যে প্লাস্টিক দূষণ একটি বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ। তাই লিউ-এর মতে গবেষণা এবং শিল্প ক্ষেত্রের মধ্যে একটি যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তবে প্লাস্টিক দূষণ এড়াতে সর্বোত্তম উপায় হল প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা।